কলকাতায় সমর্থকদের সঙ্গে গৌরব গগৈ। ছবি: কংগ্রেস নেতার টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।
বাংলার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঠিক ১০ মাস পরে রথযাত্রার দুপুরে বিধান ভবনে আবার দেখা গেল তরুণ এআইসিসি নেতা গৌরব গগৈকে। পেট্রল, ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তোপ দাগলেন তিনি। সেই দায়িত্ব দিয়েই তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়েছিল এআইসিসি। তবে গৌরবের এই সংক্ষিপ্ত সফর দলের অন্য কোনও ভাবনার ইঙ্গিত কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে কংগ্রেস শিবিরে।
সোমেন মিত্র কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন বাংলায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক ছিলেন গৌরব। সোমেনবাবুর মৃত্যুর পরে অধীর চৌধুরী যখন দ্বিতীয় বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন, প্রায় সেই সময়েই বাংলার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় গৌরবকে। অসমের এই সাংসদের সঙ্গে অধীরবাবুর সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ ছিল কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে নানা চর্চা আছে। গৌরবের বদলে এ রাজ্যে এআইসিসি-র ভারপ্রাপ্ত নেতা হয়ে এসেছিলেন জিতিন প্রসাদ। যিনি সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় বাংলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার আগে গৌরবকে বিধান ভবনে মহড়ায় পাঠানো হল কি না, সেই জল্পনাই গতি পেয়েছে সোমবার। তবে লোকসভায় বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব থেকে অধীরবাবুকে অব্যাহতি দেওয়া হলে সেই জায়গায় গৌরবের নাম নিয়েও জল্পনা রয়েছে। গৌরব অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে নতুন কোনও সম্ভাবনার বিষয়েই মুখ খোলেননি।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কংগ্রেস সর্বত্র প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে বলে এ দিন জানিয়েছেন গৌরব। বাংলায় অদূর ভবিষ্যতে বামেদের সঙ্গেই কংগ্রেসের জোট থাকবে, নাকি তৃণমূলের হাত ধরা হতে পারে, এই প্রশ্নে গৌরব এআইসিসি-র কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলায় বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ফল আমাদের সকলের কাছেই হতাশজনক। তবে পরাজয় মানেই কংগ্রেস শেষ হয়ে যাচ্ছে না। নির্বাচনী পর্যালোচনা এবং জোটের প্রশ্নে অশোক চবনের নেতৃত্বে এআইসিসি-র উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি যাবতীয় মতামত নিয়েছে। এর পরে কী হবে, হাইকম্যান্ডই ঠিক করবে।’’ আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিরোধী শিবিরের মুখ হতে পারেন কি না, এই প্রশ্নও উঠেছিল এ দিন। সরাসরি মন্তব্য না করেও গৌরবের বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তৃণমূলের ফল নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সালে। বাংলার বাইরে তৃণমূলের বিশেষ কিছু করণীয় নেই। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে লড়তে হবে। বিজেপির মোকাবিলা বা বিকল্প কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে হতে পারে না।’’
কংগ্রেসের একাধিক পদ নিয়ে নানা জল্পনার আবহেই কাল, বুধবার প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠক ডেকেছেন অধীরবাবু। বিধান ভবন থেকেই ওই দিন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর উপস্থিতিতে সংসদীয় দলের নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অধীরবাবুর যোগ দেওয়ার কথা। ভোটের পরে রাজ্যে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনের জন্য প্রদেশ সভাপতি কোনও বার্তা দেন কি না, এআইসিসি-র নির্দেশ মেনে ‘কোভিড ওয়ার্কফোর্স’ গঠনেই বা কী পদক্ষেপ হয়, সে সব দিকেই নজর থাকছে দলের।