ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে গঙ্গাসাগর মেলা চলতে পারে বলে শুক্রবার জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে বলেছিল, কমিটি চাইলে মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে। আবার ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে চালুও রাখতে পারে। কিন্তু আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে সোমবার ফের পাঁচটি মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টে। যার বক্তব্য মূলত দু’টি—প্রথমত, অবিলম্বে মেলা বন্ধ করা হোক। কেন না কমিটির রিপোর্ট পেয়ে তা কার্যকর করতে করতে ক্ষতি আরও বাড়বে। দ্বিতীয়ত, আদালতের কাছে আইনজীবীরা জানতে চেয়েছেন, নজরদারি কমিটিতে কোনও চিকিৎসক বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি কেন? যাঁরা কমিটিতে রয়েছেন, তাঁদের পক্ষে কি রাজ্যের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিচার করা সম্ভব?
সোামবার আদালত মামলাকারীদের আইনজীবীদের পরামর্শ দেয়, রাজ্যে এই মুহূর্তে যে করোনা পরিস্থিতি সেখানে দাঁড়িয়ে, এতটা ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। তাই মেলা বন্ধ করা হোক। আদালতে এ বিষয়ে সওয়াল করেন জনস্বার্থ মামলাকারীদের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এবং সূর্যনীল দাস। এ ছাড়া ছিলেন আইনজীবী ঋজু ঘোষাল, সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আইনজীবী অনিন্দ্যকুমার মিত্র এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়। ডক্টর্স ফোরামের তরফে আদালতকে অনিরুদ্ধ জানান, কলকাতা থেকে ডায়মণ্ড হারবার ব্যস্ত রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম। করোনার সাম্প্রতিক স্ফীতির দিকে নজর রেখে এখনই মেলা বন্ধ করা না হলে তা ‘সুপার স্প্রেডার’-এর রূপ নিতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন উত্তরপ্রদেশে আয়োজিত কুম্ভমেলাও ‘সুপার স্প্রেডার’ রূপ নিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। সোমবার অনিরুদ্ধ-সহ অন্য আইনজীবীরা আদালতকে জানান, গঙ্গাসাগর মেলায় নজরদারির জন্য যে কমিটি আদালত গঠন করা হয়েছে, তার রিপোর্ট পেতে বেশ কয়েক দিন লেগে যাবে। তত দিনে রাজ্যে ক্ষতি আরও বাড়বে।
এর পাশাপাশি তিন সদস্যের কমিটিতে কোনও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ না থাকা নিয়েও সওয়াল করেন আইনজীবীরা। বিকাশরঞ্জন বলেন, কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এক জন বিচারপতি, আর এক জন আমলা। তাঁদের পক্ষে পরিস্থিতির বিচার করা সম্ভব নয়। বিকাশরঞ্জন এবং অন্য আইনজীবীদের পরামর্শ অবিলম্বে ওই কমিটিতে কোনও চিকিৎসক বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে জোড়া দরকার। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানিয়ে বিকাশ বলেন, রাজ্যে নতুন করোনা স্ফীতির প্রভাবে সংক্রমণ ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কমিটিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের থাকা একান্ত দরকার।