সুবীরেশ ভট্টাচার্য।
এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে হেফাজতে চাইল সিবিআই। তবে তার আগে সুবীরেশকে আদালতে দেরিতে নিয়ে আসার জন্য আদালতের ভর্ৎসনাও শুনতে হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
সোমবার দুপুরে আলিপুর আদালতে তোলার কথা ছিল সুবীরেশকে। সিবিআই নির্ধারিত সময়ের অনেকটাই পরে আদালতে নিয়ে আসে সুবীরেশকে। দেরির কারণ জানতে চেয়ে তদন্তকারী আধিকারিক (আইও)-কে প্রশ্ন করে আদালত। কিছুটা ভর্ৎসনার সুরেই জানতে চায়, ‘নিজাম প্যালেস থেকে আলিপুর পর্যন্ত হেঁটে এলেও তো এত দেরি হওয়ার কথা নয়, তা হলে কেন দেরি হল?’ সিবিআই অবশ্য স্পষ্ট কোনও জবাব দেয়নি আদালতকে।
সোমবার সুবীরেশ সংক্রান্ত আরও একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সিবিআইকে। আদালত সিবিআইকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে সুবীরেশের ভূমিকা কী ছিল?’’ এই প্রশ্নের অবশ্য জবাব দিয়েছে সিবিআই। তারা বলেছে, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরিপ্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে কারচুপির প্রধান লোক সুবীরেশই। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি সহযোগিতা করছেন না।’’
এক সপ্তাহ আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল সুবীরেশকে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছিল। এসএসসি সংক্রান্ত বাগ কমিটির রিপোর্টেও নাম ছিল এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানের। বস্তুত, যে সময়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে এসএসসির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সুবীরেশ। সিবিআই আদালতকে বলেছিল, ৩৮১টি ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ার ঘটনায় হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার সুবীরেশকে। নিজাম প্যালেসে গত এক সপ্তাহ ধরে চলেছে সেই জিজ্ঞাসাবাদ। সোমবার সেই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হতে সুবীরেশকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। শুনানি চলাকালীন সিবিআই আবার সুবীরেশকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে আদালতের কাছে।
এসএসসি দুর্নীতিতে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই বলে প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছিলেন সুবীরেশ। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য ছিল, সুবীরেশ এখনও প্রভাবশালী। এসএসসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও সুবীরেশের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। তিনি এখনও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে রয়েছেন। দার্জিলিং হিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যও করা হয়েছে তাঁকেই। সেই সঙ্গে তিনি কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষ, নিখিল বঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি, এমনকি, রাজ্যের উপাচার্য পরিষদের সম্পাদকও। সিবিআই সূত্রে খবর, গত সাত দিন সুবীরেশকে জেরা করে প্রভাবশালী সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। সুবীরেশের বয়ানের সূত্র ধরে বেশ কয়েক জনকে জেরাও করতে চায় তারা। এ সংক্রান্ত আরও তথ্য হাতে পেতেই সুবীরেশকে হেফাজতে নিয়ে জেরার আবেদন করে সিবিআই।