স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ। ফাইল চিত্র।
পরপর দু’দিন দু’টি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহকে জেল হেফাজতে পাঠানো হল। টাকা নিয়ে স্কুলে ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণি এবং ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের মামলায় বুধবার তাঁকে জেল হাজতে পাঠায় আদালত। একই ভাবে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার তাঁর ঠাঁই হয় জেল হেফাজতে। সেই সঙ্গে প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংহের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুরের বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শেখ কামালুদ্দিন। তিন জনকে এ দিন জেল থেকেই আদালতে পেশ করা হয়।
অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন জানান তাঁদের আইনজীবীরা। কিন্তু সিবিআইয়ের কৌঁসুলি আদালতে বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ধৃতদের জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। এই অবস্থায় তাঁদের জামিন মঞ্জুর হলে তদন্ত বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক তিন জনকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বুধবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেআইনি নিয়োগে প্রদীপ ও প্রসন্ন ‘মিডলম্যান’ বা দালাল হিসেবে কাজ করতেন, এই অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। মেধা-তালিকার বাইরের প্রার্থীদের ঘুরপথে নিয়োগপত্র পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই দু’জনের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ।
এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় পার্থ, শান্তিপ্রসাদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি কল্যাণময় ভট্টাচার্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা আগে থেকেই জেল হেফাজতে রয়েছেন। এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেও সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এখন রয়েছেন সিবিআই হেফাজতে।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্যকে বুধবার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। ওই দিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকেও গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের লোকজন। পার্থ ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মামলায় পেশ করা ইডি-র সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেআইনি আর্থিক লেনদেনে মানিক জড়িত ছিলেন। টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে মানিকের বিভিন্ন মেসেজ পার্থের মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও চার্জশিটে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
পার্থ ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন ২৮ জুলাই মানিককে তাঁর মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। মানিক যাতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে না-পারেন, সেই জন্য তাঁর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিসও জারি করেছে সিবিআই।