রাজ্যের ক্রীড়ানীতি আছে কি নেই, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বনাম প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীর মধ্যে তরজা শুরু হয়ে গেল। রাজ্যজুড়ে পুর নির্বাচনের মুখে যা প্রচারের বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
দক্ষিণেশ্বরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে কেরল জাতীয় গেমসের পদকজয়ীদের হাতে পুরস্কার অর্থ তুলে দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “রাজ্যের খেলাধুলোর উন্নতির জন্য একটা ক্রীড়ানীতি তৈরি করা দরকার।”
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। বাম জমানায় তৈরি হওয়া এবং মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘অ্যাডপটেড স্পোর্টস পলিসি’র পুস্তিকা-সহ একটা চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়ে কান্তিবাবু লিখেছেন, “রাজ্যের কোনও ক্রীড়ানীতি নেই এ কথা সত্যি নয়। ২০০৯ সালে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ক্রীড়ানীতি অনুমোদিত হয়েছিল। তৎকালীন ক্রীড়াসচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ তা বাংলা এবং ইংরেজিতে অনুবাদ করে বিধায়কদের মধ্যে বিলিও করেন।” বৃহস্পতিবার চিঠি ও সেই পুস্তিকা জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।
চিঠির শেষে বর্তমান সরকারের ক্রীড়া দফতরকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী। লিখেছেন, “রাজ্যের ক্রীড়া দফতর এখন কাণ্ডারীবিহীন। বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দি আছেন কয়েক মাস! তাই মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে ব্যস্ততার মধ্যেও আপনাকে ক্রীড়া সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখতে হচ্ছে। আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, ক্রীড়ানীতিটা একটু পড়ে দেখবেন।”
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র সারদা কেলেঙ্কারিতে জেলে বন্দি। তাঁর অনুপস্থিতিতে ক্রীড়া দফতরের দেখভাল করছেন অরূপ বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রী কান্তিবাবুর চিঠি প্রসঙ্গে মুখ না খুললেও তাঁর হয়ে ব্যাট ধরেছেন অরূপ। তিনি বলেন, “ওঁরা অনেক কিছুই করেছেন, বলছেন। কিন্তু বহু ফাইল তো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কবে, কে, কি করেছে, জানি না। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা নতুন ক্রীড়ানীতি তৈরির কাজ শুরু করেছি। সবার মতামত নিয়ে সেটা তৈরি হচ্ছে।” যা শুনে কান্তিবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “আরে, আমরা যে ক্রীড়ানীতিটা করে গিয়েছিলাম, ও সেটা পড়ে দেখুক না! প্রয়োজনে তাতে মনে হলে বদল আনুক। দিল্লিতে ওই বইটা দেখে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী গিল কিন্তু বলেছিলেন, অসাধারণ। কোনও রাজ্যের এত ভাল ক্রীড়ানীতি নেই।”
কান্তিবাবুর তৈরি করা ক্রীড়ানীতি তৎকালীন মন্ত্রিসভায় পাস হলেও তা বিল আকারে বিধানসভায় পেশ হয়নি। বাম আমলের ক্রীড়ানীতিতে তিনটি উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে। এক) স্কুল স্তর থেকে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে অন্তত একটি খেলায় উৎসাহিত করতে হবে। দুই) জেলা থেকে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের তুলে এনে ক্রীড়াবৃত্তি দেওয়া দরকার এবং তিন) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের পদকদজয়ীদের টুর্নামেন্টের গুরুত্ব অনুযায়ী নগদ আর্থিক পুরস্কার প্রদান।
বাম সরকারের ক্রীড়ানীতির বিষয়বস্তু জানার পরে অরূপ বলেন, “আমাদের সরকার জানে খেলাধুলোর জন্য কী করতে হবে। সিপিএমের থেকে এটা আমরা শিখব না। বাংলার খেলার ইতিহাসে আমরাই প্রথম সরকার, যারা গেমসের পদকজয়ীদের অন্য রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছি এক কোটি টাকার উপর। প্রতি বছর খেলরত্ন, খেল সম্মান পুরস্কার চালু করেছি।” রাজ্য সরকারের এই পুরস্কার প্রদান প্রসঙ্গে অরূপের বক্তব্য প্রসঙ্গে কান্তিবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “ক্লাবগুলিকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে কোনও লাভ নেই। সেটাই করছে তৃণমূল সরকার। আমাদের ক্রীড়ানীতি অনুযায়ী আমরা জেলাশাসকদের পাঠানো ১৫০০ ক্রীড়াপ্রতিভাকে বেছেছিলাম। তার মধ্যে ৪০০ জনকে ৪০০ টাকা করে ছ’মাস ধরে দেওয়াও হয়েছিল। বাকিরা পায়নি। ভাল খেলোয়াড় তুলে আনার এটাই সঠিক পথ।”
কান্তিবাবুদের তৈরি ক্রীড়ানীতি হাতে পেলে কি তা পড়ে দেখবেন? মদন মিত্রের অনুপস্থিতিতে ক্রীড়া দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর জবাব, “দেখব। তবে আমাদেরটা ওদের চেয়ে অনেক ভাল হবে। সেখানে তো কোনও রাজনীতি থাকবে না। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি।”
কান্তিবাবুর পুরানো, না মুখ্যমন্ত্রীর নতুন রাজ্যের খেলাধুলোর উন্নতির জন্য শেষ পর্যন্ত কোন ক্রীড়ানীতি চালু হয়, তা দেখার অপেক্ষায় ক্রীড়াকর্তারা।