শিবপুর আইআইইএসটিতে বেদ, পুরাণ বিষয়ক কুইজ় প্রতিযোগিতার মঞ্চে প্রাক্তন সঙ্ঘপ্রধান এম এস গোলওয়ালকরের ছবি-সহ বই ‘চিন্তাচয়ন’। নিজস্ব চিত্র
শিবপুর আইআইইএসটি-র মতো কারিগরি এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে বেদ, পুরাণ বিষয়ক কুইজ় প্রতিযোগিতার আয়োজনের বিরুদ্ধে আগেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘ পরিবারের ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়েও সরব হয়েছিলেন অনেকে। কার্যত সেই অনুমান সত্য প্রমাণ করেই শনিবার সেই কুইজ় প্রতিযোগিতার মঞ্চে দেখা গেল আরএসএস-এর প্রাক্তন প্রধান মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকরের ছবি সম্বলিত বই ‘চিন্তাচয়ন’।
আইআইইএসটি-র এমএন দস্তুর প্রেক্ষাগৃহে এ দিন অনুষ্ঠান হয়েছে। মঞ্চের এক দিকে রাখা হয়েছিল ভারতমাতা, স্বামী বিবেকানন্দ, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ছবি। সেই ছবির সামনেই ছিল বইটি।
প্রসঙ্গত, বিজ্ঞান শিক্ষার সঙ্গে গেরুয়া শিবির এবং সঙ্ঘের ভাবাদর্শের ‘বিরোধিতা’ নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। অপবিজ্ঞানের সপক্ষে প্রচারও করতে দেখা গিয়েছে বহু সঙ্ঘ-সদস্য এবং সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠকে। এ দিন দেশের অন্যতম প্রাচীন প্রযুক্তি-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই সঙ্ঘ পরিবারের মূল ভাবাদর্শের বই এবং পুরাণ বিষয়ক কুইজ় নিয়ে সরব হয়েছেন শিক্ষা মহলের অনেকে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বভারতীয় সংগঠন আইফুকটো-র সভাপতি তথা রাজ্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামে এই সব কুইজ় হচ্ছে। আরএসএস-এর শতবর্ষ এগিয়ে আসছে। সে দিকে তাকিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সঙ্ঘের ভাবধারার প্রচার চালানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করছি।’’
সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘বেদ, পুরাণ নিয়ে কুইজ়-এর বিরোধিতা করেছিলাম। এ বার চরম সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির প্রচারক গোলওয়ালকরের থেকে আইআইইএসটি কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে বলছেন? এক দিকে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি করব, অন্য দিকে নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতার প্রচার করব, তা চলতে পারে না। যাঁরা এমন কাজ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।’’ ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির কার্যকরী রাজ্য সভাপতি নীলেশ মাইতি বলেন, ‘‘বিশ্বমানের বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ ও কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির যৌথ মদতে এ হেন কর্মকাণ্ড চলছে।’’ আইআইইএসটি-র প্রাক্তনী সৌভিক রায় বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে গবেষক হিসাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখেছিলাম, মৃণাল সেনের ছবি দেখানোর অনুমতি মিলছে না। কিন্তু আজ শুনলাম, গোলওয়ালকরের ছবিতে মালা দিয়ে কুইজ় শুরু হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
বিষয়টি নিয়ে আইআইইএসটি-র ডিন অব স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়কে ফোন এবং মেসেজ করা হয়েছিল। তিনি কলকাতার বাইরে আছেন বলে জানিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ আধিকারিক নির্মাল্য ভট্টাচার্যকে ফোন এবং মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি।