বাগ কমিটির রিপোর্টে সরকার সাহায্য করেছিল বলে জানিয়েছেন বাগ কমিটির প্রধান প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ। ফাইল ছবি।
নিয়োগ কাণ্ডে যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অনিয়ম করেছেন, সেই তথ্য প্রথম জানিয়েছিল বাগ কমিটি। রবিবার সেই বাগ কমিটির প্রধান প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ জানালেন, তদন্ত করার সময় কোনও রাজনৈতিক চাপ অনুভব করেননি তাঁরা। বরং রাজ্য সরকারই তাঁদের সবরকম সাহায্য জুগিয়েছিল।
রবিবার ভারতসভা হলে একটি আলোচনা সভায় বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ। ওই অনুষ্ঠানেই বক্তা হিসাবে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এমনকি, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরও নাম ছিল বক্তাদের তালিকায়। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত সেখানে যাননি।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রাক্তন বিচারপতি বাগকে নানা বিষয়ে প্রশ্নের মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। তারই জবাবে এ কথা বলেন তিনি। কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জানান, তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের মূল নীতি ছিল ‘রুল অফ বিজনেস’। অর্থাৎ রাজ্যের মন্ত্রী বা সচিবের পদাধিকার বলে কতটা এক্তিয়ার রয়েছে। আর কে সেই এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নিয়ম ভেঙেছেন, সেটাই খতিয়ে দেখেছিলেন তাঁরা। আর সে কাজেই তাদের সবরকম সাহায্য করেছিল রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমার কমিটির উপর সরকারের কোনও চাপ ছিল না। কোনও রাজনৈতিক চাপও ছিল না। রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে কমিটি কাজ করেছে। এখানে কেউ নাক গলাতে পারেননি।’’
বাগ কমিটির রিপোর্টেই প্রথম জানা গিয়েছিল স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে একটি কমিটি বানিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। যা বেআইনি। শুধু তা-ই নয় এসএসসসির নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই কমিটিতে পার্থ তাঁর ঘনিষ্ঠদের রেখেছিলেন বলেও জানিয়েছিল বাগ কমিটি। পরবর্তী কালে এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই ইডি এবং সিবিআই তদন্ত শুরু করে নিয়োগ মামলায়। গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ-সহ নিয়োগ কমিটিতে থাকা অনেকেই। তবে এই প্রথম এই বাগ কমিটির কাজ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বাগ কমিটির প্রধান রঞ্জিত কুমার।
রবিবারের ওই সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, ‘চ্যালেঞ্জ অফ ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেসি’ অর্থাৎ ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা। আলোচনা সভায় দর্শকাসনে ছিলেন বাংলার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী তথা বিজেপি নেত্রী পাপিয়া অধিকারী-সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। সেখানেই আলোচনা শেষে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে আমরা ‘রুল অফ বিজনেস’-এর সূত্র ধরেই প্রথমে শিক্ষা সচিবকে ডেকে পাঠাই। তিনি হাজির হন। তার পরেই একের পর এক জট খুলতে থাকে।’’