প্রতীকী ছবি।
স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এই প্রথম প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে গেল। শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা আদালতকে জানান, এই সংক্রান্ত একটি বিষয় দেখার জন্য লিখিত আবেদন করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী পার্থর অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি)। এ ছাড়া এই নিয়োগ মামলায় স্কুল শিক্ষা দফতরের তৎকালীন ডেপুটি ডিরেক্টর অলোক সরকারের নামও আদালতকে জানান শান্তিপ্রসাদ।
নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্যানেলে নাম না থাকা সত্ত্বেও চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কীভাবে, কার সুপারিশ মেনে ওই নিয়োগ করা হয়েছিল তা জানতে শান্তিপ্রসাদকে ডেকে পাঠায় হাই কোর্ট। শুক্রবার সরাসরি তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, পার্থর ওএসডি ওই বিষয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন। শান্তিপ্রসাদের এই বয়ান রেকর্ড করে আদালত। পাশাপাশি, তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন এসএসসি-র অফিসার সমরজিৎ আচার্যের নির্দেশে অনেক সুপারিশের চিঠিতেই তিনি স্বাক্ষর করেন। তার পর তা চাকরিপ্রার্থিদের অনেককে দেওয়া হয়েছে। যদিও শুক্রবারের শুনানিতে তাঁর বক্তব্যে একাধিক বার অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়। লিখিত নথি দেখে এক বার তিনি স্বীকার করেন, সুপারিশ পথ দেওয়ার জন্য সমরজিতের কাছে তিনি পাঠিয়েছেন। পরক্ষণেই আবার বয়ান দেন, নতুন কোনও সুপারিশ তিনি করতে বলেননি। শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবে কর্মরতদের কোনও সমস্যা থাকলে সেই বিষয়টি সুপারিশ করতেন।
শান্তিপ্রসাদের বার বার এমন বয়ান বদলে এক সময় বিরক্তি প্রকাশ করে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপনি শপথ নিয়েছেন। যা বলার সত্যি বলুন। না হলে অপনার বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। আপনাকে এক্ষুনি প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠাতে পারি।’’ এমনকি মামলাটি সিবিআইকে দেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে অনিয়মের অভিযোগেই থেমে থাকেনি বিষয়টি। এই নিয়োগ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ এলেও কোনও ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি তা-ও উঠে আসে তৎকালীন উপদেষ্টার বয়ান থেকে। মামলাকারী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রশ্নের উত্তরে শান্তিপ্রসাদ জানান, ২০০-র বেশি এমন অভিযোগ এসেছিল। তিনি পরীক্ষা নিয়ামক কমিটির তিন সদস্যের কাছে তা পাঠিয়েছিলেন। সেই সব সুরাহা হয়েছে কি না তাঁর জানা নেই। প্রসঙ্গত,কাঠগড়ায় তুলে এ ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ সচরাচর হাই কোর্টের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় না! প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার পর শুনানি স্থগিত করে দেন বিচারপতি। তিনি জানান, আগামী ২৫ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।