কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বাবা সুবিনবাবুর বিরুদ্ধে নব্বইয়ের দশকে কখনও কাঠ পাচার আবার কখনও গন্ডারের খড়্গ, হাতির দাঁত বা চিতাবাঘের দেহাংশ পাচারে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল বন দফতর। কিন্তু তিনি বেকসুর খালাস হয়ে যান। এখন বন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে নিচুতলার অফিসারদের একাংশ চাইছেন, ওই মামলার ফের তদন্ত করানোর জন্য উচ্চ আদালতের অনুমতি চাওয়া হোক।
নব্বইয়ের দশকের শেষে দিকে জলদাপাড়ায় জঙ্গলে গন্ডারের খড়গ চোরাচালানের অভিযোগ ওঠে সুবিন চম্প্রমারির বিরুদ্ধে। শাসক দলের এক নেতা জানান, সেই সময় জলদাপাড়া জঙ্গলের ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সুবিনবাবুকে। অভিযোগ, তখন গন্ডারের খড়্গের বিষয়ে জানতে তাঁকে মারধরও করেন বনকর্মীরা। তারপরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। কিন্তু অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। মিথ্যে মামলা গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে সুবিনবাবু ক্ষতিপূরণও পান। আলিপুরদুয়ার আদালতে বন দফতর মামলায় হেরে গেলেও কেন তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়নি, তা নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। সম্প্রতি লাল চন্দন কাঠ চোরাচালানে কালচিনির বিধায়ক উইলসনের সঙ্গে জড়িয়েছে তাঁর বাবার নামও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবিনবাবু এক সময় সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরে নব্বইয়ের দশকেই তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁর ছেলে ২০১২ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। সুবিনবাবুও এখন তৃণমূলে। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “সুবিনবাবুর বিরুদ্ধে বন দফতর অভিযোগ করেও কেন তা প্রমাণ করতে পারেনি, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আবার তদন্ত করা উচিত।” আরএসপি-র নির্মল দাসও বলেন, “অনেকে অপরাধ ঢাকতে শাসক দলের নাম লেখায়। জনস্বার্থে ওই মামলা পুনরায় চালু করা উচিত।”
তবে সুবিনবাবুর কথায়, তাঁর ছেলে উইলসনের ভাবমূর্তি খারাপ করতেই রাজনৈতিক চক্রান্ত করে এই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু সিআইডি বা সিবিআই যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। বেশ কয়েক বছর আগে বন দফতর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়েছিল। প্রমাণ করতে পারেনি। উল্টে আমাকে ক্ষতি পূরণ হিসবে দেড় লক্ষ টাকার জ্বালানি কাঠ দিয়েছিল। এ বারও তাই হবে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে হাতির দাঁত, বাঘের ছাল, গন্ডারের খড়্গ উদ্ধারের একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। বেশ কয়েকজন ধরাও পড়েছেন। কিন্তু চক্রের মূল পান্ডাদের ব্যাপারে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় জানান, বনরক্ষীর বহু পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। নতুন করে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। ঢিলেঢালা ওই নজরদারির সুযোগেই বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের কারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বন দফতরের নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তার উপরে শাসক দলের বিধায়কের নাম ওই ঘটনায় জড়িয়ে যাচ্ছে। সে জন্য পুরনো মামলাও নতুন করে তদন্ত হওয়া দরকার।”
কিন্তু, বাম আমলেই তো সুবিনবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। প্রাক্তন বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘কতদিন আগের কথা জানি না। তবে সব কিছু নিয়েই তদন্ত হোক।’’
রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য উইলসন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ‘আইন আইনের পথে চলবে। তিনি বলেন, ‘‘এর বেশি এটা নিয়ে কিছু বলব না।’’ তবে তিনি দাবি করেছেন, বাম আমলের তুলনায় বনের অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে। বনমন্ত্রী জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে ওই সব কারবার বন্ধে বন, পুলিশ, এসএসবি, বিএসএফ, সিআইডি সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে ক্রাইম কন্ট্রোল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার রোখার চেষ্টা হচ্ছে। বাম আমলে শুধু জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে।