আবছায়া: শীতের সকালে কুয়াশা কাটিয়ে চলছে ট্রেন। বুধবার, বারাসতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
চলতি সপ্তাহে শীতের থিতু হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই দেখছে না হাওয়া অফিস। তা সত্ত্বেও কুয়াশা হাজির। বুধবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত জোরালো কুয়াশার মুখে পড়ে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের একাংশ। ঘন কুয়াশার দরুন ব্যাহত হয়েছে উড়ান পরিষেবাও।
হাওয়া অফিসের খবর, বাংলাদেশ এবং সন্নিহিত পশ্চিমবঙ্গে একটি ঘূর্ণাবর্ত ছিল। তার টানে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকেছে। রাতে তাপমাত্রা তুলনায় কম থাকায় মাটির কাছাকাছি থাকা জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা তৈরি করেছে। তার উপরে বঙ্গোপসাগরে আবার একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার সৃষ্টি হওয়ায় শীত-সম্ভাবনা মার খাচ্ছে।
ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমেছে। সেই জন্যই ভোরে উড়ান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে। কেউ কেউ অবশ্য এই ঘন কুয়াশার চাদর তৈরির জন্য মহানগরের বায়ুদূষণকেও দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, বাতাসে ফের ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বেড়েছে। কুয়াশার সঙ্গে সেই ধূলিকণা মিশে যাওয়ায় মোটা চাদরের মতো ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। অনেক পরিবেশবিদের বক্তব্য, শীত যত জাঁকিয়ে বসবে, ততই বাড়বে কুয়াশার দাপট। তার সঙ্গে দূষণ বেড়ে চললে ধোঁয়াশার দাপটও বাড়তেই থাকবে। সাধারণ কুয়াশা উধাও হয়ে যায় রোদ ওঠার পরে পরেই। কিন্তু ধোঁয়াশার আস্তরণ সহজে বিদায় নেয় না।
ধোঁয়া দেখে আগুনের আঁচ পাওয়ার মতো কুয়াশা দেখে কেউ কেউ শীত ঠিক কত দূরে, সেই দিন গুনতে বসে পড়েছেন ইতিমধ্যেই।
তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বক্তব্য, চলতি সপ্তাহে শীত থিতু হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। বস্তুত, এ বছর উত্তুরে হাওয়ার পথে বার বার কাঁটা বিছিয়েছে বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্তের ঠেলায় লাগাতার জলীয় বাষ্প ঢুকেছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। সেই জোলো হাওয়াই উত্তুরে বাতাসের সামনে কার্যত পাঁচিল তুলে দিয়েছে। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বাংলাদেশ এবং সন্নিহিত পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি এ দিন দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত আরও একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার সৃষ্টি হয়েছে। এই অক্ষরেখা পরবর্তী কালে নিম্নচাপে বদলে যেতে পারে। এর প্রভাবে কলকাতা-সহ উপকূলীয় জেলাগুলিতে ফের জলীয় বাতাস ঢুকবে। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলিতে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও কোনও এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জোলো বাতাস ঢুকলে যেমন উত্তুরে হাওয়া বাধা পায়, তেমনই মেঘলা আকাশ হলে রাতের তাপমাত্রা নামতে পারে না। কারণ, সূর্যাস্তের পরে মাটি থেকে বিকিরিত তাপ বিনা বাধায় আবহমণ্ডলের বাইরে যেতে পারে না। তাই আকাশ মেঘলা থাকলে চলতি সপ্তাহে রাতে পারদ পতনের কোনও সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না আবহবিদেরা। “রাতে পর্যাপ্ত পারদ পতনের জন্য আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে,” মন্তব্য গণেশবাবুর।