মোদী-রাজে বাংলার যুব সিপিএমের হাতে তেরঙ্গা

শেষ পর্যন্ত ভারতীয় হয়ে ওঠার চেষ্টায় নামল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) বঙ্গ শাখা! নরেন্দ্র মোদীর ধাক্কায় দেরিতে হলেও বোধোদয় হল তাদের! ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কমিউনিস্টদের একাত্মতা নিয়ে নানা সময়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হয়েও সিপিএম কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি নেয় না, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে দলের রাজ্য সম্মেলন বা কোনও কোনও জেলা সম্মেলনেও প্রতিনিধিদের তরফে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

শেষ পর্যন্ত ভারতীয় হয়ে ওঠার চেষ্টায় নামল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) বঙ্গ শাখা! নরেন্দ্র মোদীর ধাক্কায় দেরিতে হলেও বোধোদয় হল তাদের!

Advertisement

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কমিউনিস্টদের একাত্মতা নিয়ে নানা সময়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হয়েও সিপিএম কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি নেয় না, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে দলের রাজ্য সম্মেলন বা কোনও কোনও জেলা সম্মেলনেও প্রতিনিধিদের তরফে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বার অবশেষে স্বাধীনতা দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে।

যুব সংগঠনের রাজ্য কমিটি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশ জুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতিগত ঐক্যের বাতাবরণের উপরে যে আশঙ্কার মেঘ জমছে, তার প্রেক্ষিতেই এ বার স্বাধীনতা দিবসের দিনটি ‘সংহতি দিবস’ হিসাবে পালন করবে তারা। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা রবিবার বলেন, “ওই দিন আমরা জাতীয় পতাকা তুলব। রাজ্য দফতরে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা তোলা হবে। সংগঠনের কার্যালয় ছাড়া অনেক গঞ্জ এলাকায় মানুষের মাঝেও পতাকা তোলা হবে।” রাজ্য বামফ্রন্ট আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বার ১৫ অগস্ট সংহতির প্রতীক হিসাবেই সর্বত্র মানব বন্ধন করার।

Advertisement

এত দিন পরে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলার সিদ্ধান্ত কেন? সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্রের বক্তব্য, “আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা এই কর্মসূচি আগে করিনি ঠিকই। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আছে। এখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নানা রকম ভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের কৃতিত্ব অনেকে নিতে চাইছেন। এই সময়ে আমাদের মনে হয়েছে এমন কর্মসূচি নেওয়া দরকার।” দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের বার্তাও যে তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি থেকে দিতে চান, স্পষ্ট করেছেন সায়নদীপ।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য অবশ্য জানাচ্ছেন, দলের গঠনতন্ত্রে জাতীয় পতাকা তুলতে কোনও বাধা নেই। কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীরা স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তুলেছেন। বিভিন্ন কারণে এ রাজ্যে সাংগঠনিক স্তরে এমন কর্মসূচি হয়তো নেওয়া যায়নি সব সময়। ওই নেতার কথায়, “দলের গঠনতন্ত্রের ২০ (ক) ধারায় বলা আছে, দেশের সংবিধানের প্রতি দল অনুগত থাকবে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শও মেনে চলবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশের কোথাওই সিপিএমের তরফে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে কোনও বাধা নেই।” ত্রিপুরার সিপিএম যেমন প্রতি বছরই রাজ্যে দলের সদর দফতর এবং প্রতি ইউনিটে ১৫ অগস্ট ও ২৬ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা তুলে থাকে।

শুধু জাতীয় পতাকা তোলাই নয়, স্বাধীনতা উদযাপনের আবহে এ বার পুরোদস্তুরই ঢুকতে চাইছে সিপিএমের যুবরা। ডিওয়াইএফআই রাজ্য দফতরের সামনে এখন ‘স্বাধীনতার স্ফূলিঙ্গরা’ শীর্ষক প্রদর্শনী চলছে স্বাধীনতার যোদ্ধাদের নিয়ে। রাজ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ইতিহাস বইয়ে ক্ষুদিরাম বসুকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে আজ, সোমবারই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যাচ্ছেন সিপিএমের যুব প্রতিনিধিরা। জামিরের দাবি, বই থেকে ওই অংশ বাদ দিতে হবে। সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা, ভোটে লাগাতার বিপর্যয়ের পরে আম নাগরিকের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই নিজেদের কর্মসূচিতে সংস্কার আনছেন বঙ্গজ কমিউনিস্টরা।

স্কুলের ইতিহাস বইয়ে ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীনকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে কংগ্রেসও। স্কুল পড়ুয়াদের কাছে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আর ‘দেশপ্রেমিক’দের এক করে দেখানো উচিত নয় বলে এ দিনই মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “এ ভাবে বিপ্লবীদের অপমান করার অধিকার রাজ্য সরকারের নেই! অবিলম্বে বই সংশোধন করা হোক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement