সাত বছরেও সরানো যায়নি বাধা। তাই যেখানে আটকে ছিল, কার্যত সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে শহরের নিজস্ব পাঁচ-পাঁচটি মেট্রো প্রকল্প। তবে খুঁড়িয়ে হলেও কিছুটা এগিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। ২০১৭ সালের জুন মাসেই ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে বলে দাবি করছেন মেট্রোকর্তারা।
কেন এই অবস্থা? মেট্রো সূত্রের খবর, বাধা সেই জমি। কোথাও জবরদখল, কোথাও বা জমি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা থামিয়ে দিয়েছে মেট্রো প্রকল্পগুলির অগ্রগতি। আদপে কবে শেষ করা যাবে ওই সব প্রকল্প, সে বিষয়ে এখন মেট্রোর কর্তারাও ধন্দে রয়েছেন। তবে ২০১৮-র জুন মাসের মধ্যে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে যাবে বলেই মনে করছে সব শিবির।
সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহের দূরত্ব ৯.৩ কিলোমিটার। ওই রাস্তায় থাকা জমি-জট রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কেটে গিয়েছে। সেখানে আর কোনও বাধা নেই। সেক্টর-৫ থেকে শিয়ালদহের মধ্যে মাটির উপরে (৫.৯৬ কিলোমিটার) ৬টি স্টেশন করা হচ্ছে। আর ভূগর্ভে (৩.৩৪ কিলোমিটার) হচ্ছে দু’টি স্টেশন।
কিন্তু নোয়াপাড়া-বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর, নোয়াপাড়া-ব্যারাকপুর, নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর-বারাসত এবং জোকা-বি বা দী বাগ, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর— এই পাঁচটি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখনও অন্ধকারে। ওই প্রকল্পগুলি ২০১১ সালের বাজেটের ঘোষিত প্রকল্প। এগুলি শেষ করা গেলে কলকাতা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাই আমূল বদলে যেত বলে মনে করেন পরিবহণ বিশেষজ্ঞেরা।
নোয়াপাড়া থেকে বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর (৩.৯৩ কিলোমিটার) পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ চালু হওয়ার পরে উত্তর শহরতলির নিত্যযাত্রীদের (গঙ্গার দু’পাড়ে) একটা বিরাট অংশ ভেবেছিলেন, লোকাল ট্রেন যাত্রার দুর্ভোগ থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে মেট্রো। মেট্রোকর্তাদের কথায়, ‘‘জমি-জট আর মামলা শেষ না হলে কোনও ভাবেই বলা সম্ভব নয়, কবে শেষ হবে প্রকল্প।’’
রেল মন্ত্রক অবশ্য বলছে, দৈর্ঘ্য কম বলে নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বরের কাজ শেষ হবেই। যেখান দিয়ে মেট্রোর ওই লাইন যাওয়ার কথা, সেই কামারহাটি পুর এলাকায় জমি নিয়ে মামলা ও বরাহনগর পুর এলাকায় ১৪৮ জন দখলদারকে সরানোর প্রক্রিয়া— এই দুটো কাজ করতে পারলেই জট কেটে যাবে।
জোকা-বি বা দী বাগের ক্ষেত্রে তারাতলায় জমি ব্যবহারের ও মোমিনপুরের স্টেশনের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অন্য দিকে, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগোলেও বিমানবন্দর এলাকায় স্টেশনের জন্য জমিই এখনও অধিগ্রহণ করা যায়নি। তবে নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর-বারাসত ও নোয়াপাড়া থেকে ব্যারাকপুর প্রকল্পের ভবিষ্যত কার্যত অন্ধকারে বলেই স্বীকার করে নিয়েছে রেল মন্ত্রক।