নালিশ জমি-দুর্নীতির

পদ গড়ে বদলি অভিযুক্ত মৎস্যকর্তাকে

দফতরকে অন্ধকারে রেখে টেন্ডার বা দরপত্র ছাড়াই একটি সংস্থাকে জমি লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক মৎস্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে। মৎস্যমন্ত্রীর নির্দেশে তার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। তদন্তের পরিণতির অপেক্ষা না-করেই অবশ্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

দফতরকে অন্ধকারে রেখে টেন্ডার বা দরপত্র ছাড়াই একটি সংস্থাকে জমি লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক মৎস্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে। মৎস্যমন্ত্রীর নির্দেশে তার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। তদন্তের পরিণতির অপেক্ষা না-করেই অবশ্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মৎস্য দফতরের অন্দরের গুঞ্জন, এটা মোটেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। বরং এটা কার্যত পদোন্নতি। রীতিমতো নতুন পদ সৃষ্টি করে বদলির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তকে।

Advertisement

বছরখানেক আগে দরপত্র ছাড়াই একটি বেসরকারি সংস্থাকে ১৩৬ একর জমি লিজ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সংস্থার নাম ‘কগনিশন ফিশারিজ’। দিঘার কাছে শঙ্করপুরে ওই জমি তাদের লিজ দেওয়া হচ্ছিল। ওই কাজ চলছিল মৎস্য দফতরের তৎকালীন যুগ্ম অধিকর্তা (সদর) শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং তদানীন্তন সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবার জারি করা দু’টি নির্দেশিকার ভিত্তিতে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, বিজ্ঞপ্তিতে সচিবের সই জাল করা হয়েছে।

জমির মালিক মৎস্য উন্নয়ন নিগম। তাদের না-জানিয়েই লিজ দেওয়ার উদ্যোগে অনিয়মের অভিযোগ উঠে শৈলেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস বিষয়টি মৎস্যমন্ত্রীর নজরে আনেন। সঙ্গে সঙ্গেই তদন্তের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

Advertisement

কতটা এগিয়েছে সেই তদন্ত?

মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝেই তাঁরা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই তদন্ত এখনও চলছে। সিআইডি-র কাছ থেকে এখনও কোনও রিপোর্ট পাননি তিনি। তবে অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে শৈলেন্দ্রবাবুকে দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (সদর)-র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুগ্ম অধিকর্তা (ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন ইউনিট) পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

গুরুতর অভিযোগ উঠলে বদলি করে দেওয়াটা সরকারি ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নিয়ম। কিন্তু মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, অভিযুক্ত আধিকারিককে বদলি করার জন্য নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। ওই দফতরের কর্মীদের একাংশের মতে, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত কর্তাকে যুগ্ম অধিকর্তা (সদর)-র পদ থেকে সরানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার বদলে শৈলেন্দ্রবাবুকে যে-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা আসলে ওঁকে প্রোমোশন দেওয়ারই সামিল।

কিন্তু এমন ব্যবস্থা কেন?

মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক রাঘববোয়ালের নাম বেরিয়ে আসবে। তাই বদলি করা হলেও দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদ।’’

মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথবাবু অবশ্য নিজের দফতরের এই গুঞ্জন বা অভিযোগে কান দিতে রাজি নন। ‘‘জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের গুরুত্ব বুঝেই শৈলেন্দ্রবাবুকে যুগ্ম অধিকর্তা (সদর)-র পদ থেকে অন্য দায়িত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন পদে তিনি মোটেই স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন না। তাঁর উপরে থাকছেন সচিব পদমর্যাদার এক জন অফিসার,’’ বলছেন মৎস্যমন্ত্রী।

ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হল না কেন?

‘‘সিআইডি-র তদন্ত চলছে তো। সেই তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগে অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না,’’ এ ভাবেই নিয়মবিধি ব্যাখ্যা করছেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথবাবু।

যাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, তাঁকে ফের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া কতটা সমীচীন? যে-কর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি অনিয়মের অভিযোগ, নতুন গুরুত্বপূর্ণ পদ গড়ে তাঁকে তার দায়িত্ব দেওয়াটাও নিয়ম ভাঙার অন্য উদাহরণ নয় কি?

জবাব দিতে চাননি মন্ত্রী।

জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে বদলির নামে কার্যত পদোন্নতির অভিযোগ— কোনও বিষয়েই নিজের বক্তব্য জানাতে চাননি অভিযুক্ত মৎস্য আধিকারিক। প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলে শৈলেন্দ্রবাবু জানান, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement