ফিরহাদ (ববি) হাকিম। ফাইল চিত্র।
নারদ মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীকে ‘চক্রান্ত’ করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ নতুন নয়। এ বার সেই অভিযোগে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা যোগ করলেন নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যকে ভিত্তি করে শুক্রবার ববির মন্তব্য, ‘‘ওই কেসে কী হয়েছিল তা বিরোধী দলনেতা বলে দিয়েছেন।’’
শুভেন্দু নিজেও নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত। তখন তিনি তৃণমূলে ছিলেন। এফআইআর-এ তাঁর নাম আছে। এখন তিনি বিজেপিতে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেল ঘুরে এসেছেন ববি। তাঁর সঙ্গে জেলে গিয়েছিলেন এখন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মদন মিত্র।
শুভেন্দু সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহের কথা উল্লেখ করে বলেছেন— সাংসদকে কাজে লাগিয়ে ওই নেতা এই চক্রান্ত করেছিলেন। ববির এ দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দুর অভিযোগই মান্যতা পেয়ে যায় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত। আর সে ক্ষেত্রে বিষয়টি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও আলোড়ন তোলার পক্ষে যথেষ্ট।
ববির কাছে পরে জানতে চাওয়া হয়, শুভেন্দু যে-ভাবে তৃণমূলের এক নেতাকে ইঙ্গিত করেছেন আপনি কি তার সঙ্গে সহমত? ববি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘চক্রান্ত হয়েছে তা আমিও বলছি। কিন্তু শুভেন্দু যে নেতার নাম করে আঙুল তুলেছেন তিনি কোনও ভাবে এর সঙ্গে জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি না।’’
এ দিনই বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরে দলীয় কর্মসূচিতে এসে দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ববির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলি, দাদা ভিতরে যাবেন। অপেক্ষা করুন। আপনারা যে ভয় পাচ্ছেন, সেটা দেখেই আমাদের ভাল লাগছে।” তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ববির জবাব, ‘‘কোনও অন্যায় করিনি। দেশের কোনও আইনে আমার বিচার হলে আমি তার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘এজেন্সিকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। জেলে যেতে ভয় পাই না। অন্যায়ের
প্রতিবাদ করে যাব।’’ তার পরেই কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘চাইলে গ্রেফতার করুন। কিন্তু পরিবারের সম্মানহানি কেন? কী পাপ, কী অন্যায় করেছি আমি?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নারদ মামলায় আমিও জেলে গিয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশ মেনে জেলেই ছিলাম, হাসপাতালে যাইনি।’’
আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এ দিন ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘টাকার বস্তা গিয়েছে কালীঘাটে। এরা সব চুনোপুঁটি। আসল হল হাওয়াই চটি।”
মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে বিজেপির এই অভিযোগের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য দলের অন্যতম মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘মমতাই একমাত্র বিজেপির চোখে চোখ রেখে বিরোধিতা করছেন। তাই এ সব কুৎসা চলতে থাকবে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘সুকান্ত ছোট মুখে বড় কথা বলছেন। অর্থ, এজেন্সি সহ সব কিছু নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারাও কিছু করতে পারেনি।’’ আর নারদ ‘চক্রান্ত’ সম্পর্কে শুভেন্দুর তোলা অভিযোগ নিয়ে তাপসের মন্তব্য, ‘‘এ সব অর্থহীন কথার জবাব কতবার দেব!’’