মৃত দমকল কর্মী সুকান্ত সিংহরায়। ছবি: দীপঙ্কর দে
সিইএসসির গাফিলতির কারণেই গাছ কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বালির দমকলকর্মী সুকান্ত সিংহরায়ের। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনায় ধৃত তিন সিইএসসি কর্মী দোষ স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। ধৃত কামাল আখতার, শান্তনু মাহাতো ও রাজনারায়ণ রায়কে বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আজ, শুক্রবার ফের তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, তাড়াহুড়ো করে বিদ্যুৎস্তম্ভের দু’টি ফেজ়ের মধ্যে একটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল বলে বুধবার রাতেই বেলুড় থানায় ভুল স্বীকার করেন ধৃতেরা। এমনকি, দমকলকর্মীরা কাজ করার সময়ে সেখানে ছিলেন না তাঁরা। দমকল সূত্রের খবর, বুধবার ডালটি কাটার বিষয়ে প্রথমে সিইএসসি-র সঙ্গে কথা বলেন লিলুয়া দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক। সিইএসসি জানায়, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময়ে দমকলকর্মীদেরও থাকতে হবে। লিলুয়া থেকে তা জানানো হয় বালি কেন্দ্রে।
বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ সুকান্তদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি রামকৃষ্ণ সাহা। তাঁর দাবি, তখন সিইএসসি-র কর্মীরা জানিয়েছিলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। অ্যালুমিনিয়ামের মই ব্যবহার করলে বিপদ হতে পারে বলে দমকলকর্মীরা সিইএসসি-র বাঁশের মইটি চান। এ নিয়ে দু’তরফে কথা কাটাকাটিও হয়। পরে বাঁশের মই নিয়েই কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, সুকান্ত যখন কাজ শুরু করেন, তখন সিইএসসি-র কর্মীরা সেখানে ছিলেন না। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানান, তাঁরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
তারকেশ্বরের সন্তোষপুর গ্রামে সুকান্তর বাড়ি। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুশান্ত সিংহরায়ের দুই ছেলের মধ্যে সুকান্ত ছোট। সুশান্তবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সিইএসসি-র কাজ ক্ষমার অযোগ্য। যাঁদের গাফিলতিতে ছেলের মৃত্যু হল, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ দাদা সুদীপ্ত বলেন, ‘‘সংসারের সব দিকে ভাইয়ের নজর ছিল। নতুন বাড়ির দরজা-জানলা ও নিজের হাতে রং করছিল।’’ বন্ধু লাল্টু রাউতের খেদ, ‘‘কতটা গাফিলতি থাকলে এ ভাবে এক জনের মৃত্যু হয়!’’
বেলুড় শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্রের ভিতরে গাছের যে ডালটি অর্ধেক ভেঙে বিদ্যুতের তারের উপরে পড়ে ছিল, সেটি বুধবার সন্ধ্যার ঝড়ে পুরো ভেঙে জিটি রোডে পড়ে। সেটি সরানো হলেও হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখনও অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তারের উপরে ডাল পড়ে থাকায় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। হাওড়ার পুর কমিশনার ধবল জৈন বলেন, ‘‘গাছ পড়ে রয়েছে
খবর পেলেই কর্মী পাঠানো হচ্ছে। কোথায় গাছ পড়ে রয়েছে, তার তালিকা করতে বলা হয়েছে থানা, ট্র্যাফিক গার্ডকে।’’ হাওড়ার ডিভিশনাল
ফায়ার অফিসার দীপঙ্কর পাঠক বলেন, ‘‘গাছ কাটা, বিদ্যুতের তার, খুঁটি সরানোর মতো কাজ পুলিশ, সিইএসসি-র উপস্থিতিতেই করতে বলা হয়েছে দমকলকর্মীদের।’’