শোকার্ত সঙ্গীতার মা।
ব্যক্তিগত আক্রোশেই বান্ধবী সঙ্গীতা আইচকে খুন করেছে বলে স্বীকার করল সুব্রত সিংহ ওরফে রাজা। শনিবার জগদ্দল থানায় আত্মসমর্পণের পরে সে এ কথা কবুল করেছে। পুলিশ জানায়, সুব্রত তাদের জানিয়েছে, সঙ্গীতা ওরফে টিনার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ইদানীং অন্য একটি যুবককে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। সেই কারণেই টিনাকে সে কুপিয়ে মেরেছে।
শুক্রবার বিকেলে বারাসত নতুন পুকুর অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে কিশোরী ভলিবল খেলোয়াড় টিনাকে কুপিয়ে খুন করার পর রাজা উধাও হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সারা রাত সে তার জগদ্দলের দক্ষিণ চণ্ডীতলার বাড়িতে ফেরেনি। এ দিন সকালে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে জগদ্দল থানায় ধরে নিয়ে আসেন তার বাবা স্বপন সিংহ। আইসি সঞ্জীব চক্রবর্তীকে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে সুব্রত আত্মসমর্পণ করতে চায়।’’ পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি দল রাজাকে গ্রেফতার করে বারাসত থানায় নিয়ে যায়। আজ, রবিবার তাকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হবে।
বারাসত হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর এ দিন বিকেলেই টিনার দেহ তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তত ক্ষণে রাজার গ্রেফতার হওয়ার খবর পৌঁছে গিয়েছিল টিনার পরিবারের কানে। টিনার মা শুভ্রা আইচ বলেন, ‘‘রাজা আমাদের এত বড় ক্ষতি করবে তা ভাবতে পারিনি।’’ রাজার চরম শাস্তি দাবি করেছে টিনার পরিবার। নতুন পুকুরের মাঠে এ দিন থেকেই জাতীয় স্তরের ভলিবল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা ছিল। টিনার খুনের পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ দিন টিনার বাড়িতে যান বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার।
জগদ্দল থানায় সুব্রত সিংহ ওরফে রাজা।
বছর কুড়ির সুব্রত ওরফে রাজা জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড়। টিনাও বাংলা জুনিয়র ভলিবল দলের সদস্য ছিল। পুলিশ সূত্রের দাবি, ভলিবলের সূত্রেই দু’জনের আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। এ দিন জগদ্দল থানার বাইরে দাঁড়িয়ে রাজার দাবি, ‘‘টিনার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এখন আর একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম করছিল ও। টিনার সামনেই ওই ছেলেটি আমাকে ফোনে হুমকি দিত। এটা আমি মানতে পারিনি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতার হওয়ার পর রাজা মানসিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত।
রাজার বাবা স্বপনবাবুর বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবসা। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে খাওয়ার সময় রাজার সঙ্গে খেলা নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই ছেলেই যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা ভাবতেও পারেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওর মতো শান্ত ছেলে এত হিংস্র হয়ে উঠবে, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’’ দক্ষিণ চণ্ডীতলার বাসিন্দারাও বলছেন, ঋষি অরবিন্দ স্কুলের ছাত্র রাজা এলাকায় লাজুক, মুখচোরা ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিল। এমন ছেলে যে এ ভাবে খুন করতে পারে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই। এ দিন রাজাদের বাড়িতে পড়শি-পরিজনদের ভিড় জমেছিল। তারই মাঝে বসে চুপচাপ ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন রাজার মা রেখা সিংহ।
ঘটনার পরে রাজা যে ভাবে পালিয়েছিল, পুলিশের সন্দেহ মাঠের পাশে তার কোনও সঙ্গী মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। তবে সেই সঙ্গী কে, এ দিন রাত পর্যন্ত তা জানতে পারেনি পুলিশ। বলছে, খুনের পর রাজাকে পালাতে সাহায্য করলে সেই সঙ্গীও খুনে সমান ভাবে অভিযুক্ত হবে। এ ব্যাপারে রাজাকে জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
নিজস্ব চিত্র