ফরজানা-পর্বে আরও অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলমকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সেই মর্মে মামলা রুজু করার জন্য কড়েয়া থানায় আর্জি জানাল তাঁর পরিবার। অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে রাজ্য জুড়ে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরজানার পরিজনেরা।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, অভিযোগ তারা পেয়েছে। তবে পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘মৃত্যুর পরে যে হেতু ময়না-তদন্ত করা হয়নি, তাই খুনের অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন।’’ তা হলেও এই অভিযোগের রাজনৈতিক অভিঘাত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে শাসকদলের একাংশ। পুরসভার সংখ্যালঘু নেত্রী ফরজানার এমন পরিণতির পরে তাঁর পরিবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সংখ্যালঘু-দরদ’ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলছে। এ দিন ফরজানার দাদা খুরশিদ আলম অভিযোগ করেন, ‘‘নিজেদের মুসলিম-দরদী বলে প্রচার করলেও আদতে সরকার কতটা মুসলিম-বিদ্বেষী, এ থেকেই স্পষ্ট!’’
মৃত্যুর পরে বিধানসভায় ফরজানার নাম শোকপ্রস্তাবে না রাখা বা তাঁর শোকসভায় তৃণমূলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর না যাওয়া তাঁর পরিবারের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। এর পরে রবিবার প্রয়াত ফরজানার আপ্ত সহায়ক আমান আহমেদ কড়েয়া থানায় খুনের মামলা রুজুর আর্জি জানিয়েছেন।
বিধানসভা ভোটের আগে ফরজানার পরিবারের তরফ থেকে তোলা এই অভিযোগ শাসক দলের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। পুরভোটের আগেই তৃণমূলের অন্দরে ফরজানার সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের টানাপড়েন চলছিল। অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে ফরজানার হেরে যাওয়া এবং তার পরে দলেরই এক গোষ্ঠীর লোকজনের হাতে তাঁর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তিক্ততা আরও বেড়েছিল। মারধরের ফলেই তাঁর বোনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের দাদা খুরশিদ। এ দিনও খুরশিদ বলেন, ‘‘৩০ এপ্রিল মাখনলাল দাস-সহ ১৬ জন মিলে আমার বোনকে নৃশংস ভাবে মারধর করে। তার পর থেকেই ও গুরুতর অসুস্থ হয়। এই ঘটনার জেরেই আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে।’’ আজ থানায় খুনের মামলা রুজু করার আর্জি জানিয়ে আমানও বলেন, ‘‘দিদি ৪ মে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পরে প্রায়ই আমাদের বলতেন, থানা থেকে মামলা তুলে না নিলে তাঁকে ও তাঁর একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তরা।’’ আমানের অভিযোগ, মাখনলালদের শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের জেরেই হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে ফরজানার।
সংবাদপত্র থেকে খুরশিদরা জেনেছেন, ফরজানার ছেলে সাজিলের পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার যাবতীয় দায়িত্ব নিতে চান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই প্রসঙ্গে খুরশিদ বলেছেন, ‘‘ফিরহাদ সাহেব জেনে রাখুন, সাজিলের দেখাশোনার জন্য ওর মামারা রয়েছে।’’ ক্ষুব্ধ খুরশিদের কথায়, ‘‘সাজিলের মতো বনেদি পরিবারের ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা ফিরহাদের নেই! দয়া করে ফরজানার মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি না করে তিনি দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’ এই অভিযোগ শুনে পুরমন্ত্রী অবশ্য বলছেন, ‘‘ফরজানার পরিজনদের কেউ বিভ্রান্ত করছেন! আত্মীয় হারানোর শোক থেকেই ওঁরা এ সব কথা বলছেন।’’