কোলে মার্কেটে চলছে লঙ্কা বিক্রি। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ-ও হয়!
রবিবার কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন বাজারে কাঁচালঙ্কা বিকিয়েছে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে। সরকারি ‘সুফল বাংলা’ স্টলে ১৪০ টাকায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে চাষিরা স্থানীয় বাজারে এসে বিক্রি করেছেন ৮০-১০০ টাকায়।
একই আনাজ। কিন্তু দামের এত রকমফের?
সরকারি স্টলের আনাজ সরকার সরাসরি চাষিদের থেকে কেনে। সমস্যাটা খুচরো বাজারের। চাষি থেকে খুচরো বিক্রেতা— সকলেই দাবি করছেন, আনাজের দাম নির্ভর করে জোগান এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপরে। যাঁদের আর এক পরিচয় ‘ফড়ে’। আনাজ সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে, চাষিরা বাধ্য হন ফড়েদের দামেই আনাজ বেচতে। মাঠ থেকে চাষিরা কোন আনাজ কতটা পরিমাণ আনতে পারছেন, তার উপরেই পাইকারি বাজারগুলিতে আনাজের দাম নির্ধারিত হয়।
আমপান এবং তার পরে টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কাঁচালঙ্কার। ফলে, জোগান কমেছে। তাই দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুচরো বাজারে দামের ডবল সেঞ্চুরিও হয়ে যাবে?
প্রশ্ন শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন কলকাতার পাইকারি আনাজ ব্যবসায়ী রবি মিত্র। তাঁর পাল্টা ক্ষোভ, ‘‘লকডাউনের পরে কোথায় ছিলেন আপনারা? তখন তো চাষিরা জলের দরে আনাজ বেচেছেন। পটল তখন খুচরো বাজারে ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমরা পরিবহণের অভাবে ব্যবসাই করতে পারিনি। এখন পরিবহণ ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দু’টো পয়সা দেখতে পাচ্ছি।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় হাটে সাধারণত দু’হাজার চাষি ১৫০০ মণ আনাজ আনেন। ফলন বাড়ার দরুণ বাজারে আনাজের আমদানি বাড়লে ফড়েরা দাম কমিয়ে দেন। উল্টোটা ঘটলে দাম বাড়ে। চাষিদের কাছ থেকে আনাজ নিয়ে আড়তদারেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিক্রি করেন। তাঁরা দামের দুই শতাংশ টাকা রাখেন বলে আড়তদারেরা জানান।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ঝাড়াই-বাছাই করে আনাজ গাড়িতে তোলা, মজুর খরচ, দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফলে কিছু আনাজ নষ্ট হওয়া, এ সব কারণে লাভ পোষাতে দাম বাড়ে। সে কারণেই কাঁচালঙ্কার দাম বাড়ছে। বাজার ভেদে খুচরো ব্যবসায়ীরা তা কিনছেন ২০০ টাকা কেজি দরে। তাঁরা আবার কিছুটা দর বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। চাপ পড়ছে গেরস্থের পকেটে। চাষি এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ টাকা যাচ্ছে ফড়েদের পকেটেই।
হিঙ্গলগঞ্জের চাষি ফড়েদের ৮০ টাকা কেজি দরে লঙ্কা বেচছেন। ১০ কিলোমিটার দূরের খুচরো বাজারে সেই লঙ্কাই ২০০ টাকার দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের দাবি, ফড়েদের এড়িয়ে এখন নিজেদের ফসল নিজেরাই বিক্রি করে লাভ করতে পারছেন চাষিরা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যে তার ব্যতিক্রম ঘটছে, মানছেন রাজ্য সরকারের তৈরি টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা। কিছু চাষি অবশ্য অন্য রাস্তা নিয়েছেন।