মুখ ফিরিয়ে পরিবার, অন্তঃসত্ত্বা মনোরোগীকে দেখবে কে

ওই ত‌রুণীর বাবা-মা সোদপুরে থাকেন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে সোদপুরেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জামাই বিয়ের পরে মারা যান। মেয়ে কখনও তাঁদের কাছে থাকতেন। কখনও শ্বশুরবা়ড়িতে। মেয়ের মানসিক অসুস্থতার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:০০
Share:

বাসস্ট্যান্ডের এক ধারে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন বছর আঠাশ-উনত্রিশের অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। সঙ্গে জিনিস বলতে ছোট্ট একটি ব্যাগ।

Advertisement

বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীরা সকলেই দেখেছেন ওই তরুণীকে। কিন্তু কেউ এক বারের জন্যও তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেননি, কী হয়েছে। ওই ভাবে বহুক্ষণ কাটার পরে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক সদস্যের। তিনিই নিজের সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এবং শিলিগুড়ি পুলিশের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করেন ওই তরুণীকে। জানা যায়, ওই তরুণীর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর এলাকায়। কী করে তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছলেন, সে ব্যাপারে বিশদে জানাতে পারেননি ওই তরুণী। গত ১৪ মার্চ এই ঘটনা ঘটে শিলিগুড়িতে।

এর পরে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ শিলিগুড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে আনে। কিন্তু তাঁকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুলিশ। কারণ, ওই তরুণীর বৃদ্ধ বাবা-মা থাকলেও তাঁদের আর্থিক ক্ষমতা নেই মেয়েকে রাখার। আর পেশায় ভ্যানচালক দাদা নিজের সংসারে বোনকে ঠাঁই দিতে নারাজ! ফলে আপাতত নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ওই তরুণীকে পানিহাটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী এখনই হাসপাতাল থেকে ছুটি চাইছেন। প্রেমিকের কাছে যেতে চান তিনি। কিন্তু কে তাঁর প্রেমিক, তাঁর বাড়িই বা কোথায়, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না! পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই তরুণীকে উদ্ধার করার পরে বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তারা জানিয়েছে, ওই তরুণীর সঙ্গে কোনও সঙ্গী ছিলেন না। তিনি শুধু জানাতে পেরেছিলেন, তাঁর বাড়ি সোদপুরে। কার সঙ্গে শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন, তা-ও বলতে পারেননি তিনি। শুধু দাবি করেছিলেন, তাঁর এক প্রেমিক রয়েছে। ওই সংস্থার তরফে রাজু নেপালি বৃহস্পতিবার ফোনে বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছে, ওই তরুণীকে পাচার করার জন্যই কলকাতা থেকে কেউ এনেছিল। কিন্তু কোনও ভাবে অন্তঃসত্ত্বা বোঝার পরে তাঁকে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। ওই তরুণীর মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’

ওই ত‌রুণীর বাবা-মা সোদপুরে থাকেন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে সোদপুরেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জামাই বিয়ের পরে মারা যান। মেয়ে কখনও তাঁদের কাছে থাকতেন। কখনও শ্বশুরবা়ড়িতে। মেয়ের মানসিক অসুস্থতার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু শিলিগুড়িতে তিনি কার সঙ্গে গিয়েছিলেন, তা তাঁরাও জানেন না। এখন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের দায়িত্ব তাঁরা নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে মানসিক ভাবে অসুস্থ ওই তরুণীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পুলিশ। তবে ওই তরুণীর মা হাসপাতালে মেয়ের দেখভাল করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement