কান্না: বিভাসকান্তি পাঠকের শোকার্ত পরিবার। ছবি: সুজিত দুয়ারি
তখন সন্ধ্যা ৭টা হবে। আমি রান্নাঘরে ছিলাম। হঠাৎ শুনলাম বিকট একটা আওয়াজ। প্রতিবেশীদের চিৎকারে বুঝতে পারি, একটি গাড়ি খাদে পড়েছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি নীচে থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। বাংলা কথা শুনে বুঝতে পারি গাড়িটি পর্যটকদের। কিন্তু চারিদিকে অন্ধকারের মধ্যে দুম করে নীচে নামাও ঝুঁকির ছিল। সবাইকে বললাম, যে যার বাড়ি থেকে সার্চলাইট, টর্চ যা আছে নিয়ে আসুন। তারপর কিছু মোটা দড়ি জোগাড় করা হল। সেই দড়ি ধরে ধীরে ধীরে আমরা কয়েক জন গাড়ি পর্যন্ত নামি।
গাড়িটি প্রায় ২৫০ ফুট নীচে গিয়ে গাছ-পাথরে আটকে গিয়েছিল। সেখান থেকে জখমদের বের করে উপরে তোলা খুবই শক্ত ছিল। সব থেকে কঠিন ছিল গাড়ির দরজা ভাঙা। না হলে গাড়ির ভিতর থেকে কাউকে বার করা যাচ্ছিল না। কিন্তু দরজা ভাঙতে বেশি চাপ দিলে গাড়িটি আরও গড়িয়ে নেমে যেতে পারত। তাই গাড়িটিকে দড়ি ও তার দিয়ে টেনে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছিলাম আমরা। তার পরে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় এক এক করে যাত্রীকে বাইরে বের করি। একটি মোটা দড়ি গাড়ি ধরেই সবাইকে উপরে তোলা হয়। গ্রামবাসীরা সকলেই সহযোগিতা করেছেন। উপরে অ্যাম্বুল্যান্সও তৈরি ছিল।
গাড়িটি পড়েছিল জঙ্গলে। গ্রামের কয়েক জন মহিলা নেমে দ্রুত জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করেন। দু’জন গাড়িতে এমন ভাবে আটকে পড়েছিলেন যে, তাঁদের বের করার জন্য আমাদের এক জনকে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিতরে ঢুকতে হয়েছিল। এক জন পর্যটকের পা কিছুতে আটকে ছিল। ছাড়ানো যাচ্ছিল না। উদ্ধার করার সময় গাড়ির চালকের জ্ঞান ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। কে মারা গিয়েছেন, কে জীবিত আছেন সেটা ওই মুহূর্তে মাথায় ছিল না। সকলকে উদ্ধার করাই ছিল মূল লক্ষ্য। পরে শুনলাম, পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। খুবই খারাপ লেগেছে। তবে যারা আহত, প্রার্থনা করি তাঁরা সকলেই যেন সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন।