আলিপুরদুয়ার শহরে দাবি মতো চাঁদা না পেয়ে শিক্ষিকার ঘরে হামলা চালানোর নালিশ স্থানীয় কালী পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। ছবি: নারায়ণ দে।
কোথাও চাঁদার অঙ্ক কুড়ি হাজার টাকা। এবং সেই টাকা চাওয়া হল খোদ পুলিশের বাড়ির লোকের কাছেই। আপত্তি করায় ঢিল মেরে ভেঙে দেওয়া হল কাচ। বাড়িতে যে একটি শিশু রয়েছে, তোয়াক্কা করা হল না সে সবও। কোথাও আবার দাবি মতো চাঁদা না পেয়ে মারধরের অভিযোগও উঠল।
কালীপুজোর মুখে এমনই জুলুমবাজি অব্যাহত উত্তর থেকে দক্ষিণ, বঙ্গের সর্বত্র।
আলিপুরদুয়ারে যেমন গভীর রাতে শিক্ষিকার বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে আলিপুরদুয়ার শহরের বাবুপাড়া এলাকায়। তিন বছরের মেয়ে ও অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন প্রাথমিক স্কুলের ওই শিক্ষিকা টুম্পা সাহা। বাবার বাড়ির কাছেই মাস কয়েক আগে একটি বাড়ি কেনেন তিনি। নতুন বাড়ি কিনেছেন, তা হলে কেন মোটা টাকা চাঁদা দেবেন না— এই যুক্তিতে কালীপুজোর আগে তাঁকে এ বার কুড়ি হাজার টাকার বিল ধরায় স্থানীয় কয়েক জন যুবক। টুম্পা দেবী চাঁদা দিতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘মা কয়েক মাস আগে মারা গিয়েছেন। তাই বাবার কাছে থাকব বলে এখানে বাড়ি কিনে এসেছি। তা হলে কেন এত বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে যাব?’’
এর ফল ভুগতে হয় হাতেনাতে। টুম্পা সাহা বলেন, “গত বৃহস্পতিবার রাত তখন দেড়টা হবে। পুজো কমিটির সদস্যরা এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার পরে বাঁশ দিয়ে খুচিয়ে ও পাথর মেরে বারান্দার জানলার কাচ ভেঙে দেয়।’’ তিনি জানান, ‘‘তখন ঘরে আমি আমার তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ছিলাম। সারা রাত আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলাম আমরা। পরদিনই আলিপুরদুয়ার থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
টুম্পার স্বামী সদানন্দ মোদক চাকরি করেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে। তিনি এখন আলিপুরদুয়ারে নেই। পর দিন তাই একাই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন টুম্পা দেবী। পরে তিনি জানান, তাড়াহুড়োয় অভিযুক্ত ক্লাবের নামটি জেনে যাননি তিনি। তবে তারা কারা, সেটা বিলক্ষণ চিনিয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, বাড়ি কাছে বিএম ক্লাবের মাঠে যারা পুজো করছে, তাদের ছেলেরাই এসেছিল চাঁদা চাইতে।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। তদন্ত হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, আলিপুরদুয়ার শহরের যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি কোচবিহার জেলার মধ্যে। সে জন্য কোচবিহার পুলিশের সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী জানান, এক স্কুল শিক্ষিকার বাড়িতে গভীর রাতে এমন হামলার ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেন।’’
বি এম ক্লাব ময়দানে একটিই মাত্র কালী পুজো হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুজো কমিটির সদস্যরা জানান, ওই মহিলার বাড়িতে কেউ চাঁদা আনতে যায়নি। দাবি করেন, ‘‘ওই মহিলা রসিদ দেখান। আর বলুন, কারা চাঁদা চাইতে গিয়েছিল।’’ টুম্পা দেবীর অভিযোগ অনুযায়ী, ওই পুজো কমিটি কোনও রসিদ দেয়নি। তবে তাঁর দাবি, চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি তিনি ‘ভয়েস রেকর্ডিং’ করে রেখেছেন।
চাঁদা চেয়ে না-পেয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরেও। শনিবার ভোরে কোলাঘাটে নতুন বাজারের কাছে কোলাঘাট-জশাড় সড়কে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়। স্থানীয় পূর্ব দাসপাড়ার কয়েকটি পুজো কমিটির সদস্য কোলাঘাট ফুলবাজার ও মাছ বাজারে আসা ফুল চাষি, মাছ ব্যবসায়ীদের আটকে জোর করে চাঁদা আদায় করছিলেন বলে অভিযোগ। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় দুই মাছ ব্যবসায়ীকে তাঁরা মারধর করেন বলেও অভিযোগ। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সকাল ৫টা থেকে মাছ ব্যবসায়ী ও ফুল চাষিরা সড়ক অবরোধ শুরু করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে দু’ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’
পুলিশি তৎপরতার দৃষ্টান্ত দেখা গেল নদিয়ায়। শনিবার জোর করে চাঁদা আদায়ের নালিশে জেলা জুড়ে ১৪ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার মধ্যে রানাঘাট থানা এলাকা থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর গাড়িয়ে থামিয়ে চাঁদা তোলার সময় তাদের ধরা হয়েছে।