প্রতীকী ছবি।
পাঠ্যবইয়ে পরিবেশ-জীবজগৎ নিয়ে হাজারো কথা লেখা। কিন্তু মাঠেঘাটে নেমে হেঁটে-বেড়িয়ে হাতে-কলমে পরিবেশকে চেনে ক’জন?
মাঠে নেমে সেই পরিবেশ আর জীবজগৎকে হাতে-কলমে চেনাতেই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের পরিবেশ দফতর। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো ইওর ওন বায়োডাইভার্সিটি’, জীববৈচিত্রকে চেনো, জানো। ওই দফতরের অন্দরে অবশ্য এর চলতি নাম ‘দেখব এ বার জগৎটাকে’।
পরিবেশ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, এই প্রকল্পের সূচনার জন্য প্রাথমিক ভাবে কালনা মহকুমাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দফতরের বিশেষ সচিব বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য কালনার মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে এই নিয়ে বৈঠক করেছেন। আগামী মাসেই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে। ভবিষ্যতে অন্যান্য জেলাতেও এই প্রকল্প চালু হবে। পরিবেশ-সচিব অর্ণব রায় ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন জেলাশাসকদের।
প্রকৃতিকে চেনাজানার পাঠ দেওয়া হবে ঠিক কী ভাবে?
পরিবেশ দফতরের খবর, প্রতিটি ব্লক থেকে চারটি স্কুলের সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির পডুয়াদের নিয়ে চারটি করে দল গড়া হবে। জীববৈচিত্র রয়েছে, এমন জায়গায় বিভিন্ন দলে ভাগ করে ছেড়ে দেওয়া হবে তাদের। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ, চার দিকে আলাদা আলাদা ভাবে এক-দেড় কিলোমিটার হাঁটার সময়ে গাছপালা, পাখি, পশু, পতঙ্গ— যা নজরে আসবে, নোটবুকে তাদের কথা লিখে রাখবে পড়ুয়ারা। নতুন প্রজন্ম এই হাঁটাপথেই নতুন করে চিনবে প্রকৃতিকে। পড়ুয়াদের প্রকৃতির পাঠ দেবেন মূলত রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের বিজ্ঞানীরা। তবে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় পর্ষদের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কিছু বাসিন্দাকেও কাজে লাগানো হবে। পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বি়ডিও-রা স্থানীয় জীববৈচিত্র কমিটির সদস্য বা অন্য যোগ্য ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবেন। পরিবেশ দফতর তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তুলবে।’’
পরিবেশ দফতরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পরিবেশবিদদের অনেকেই। তাঁদেরই এক জন, পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, এই ধরনের প্রকল্প পড়ুয়াদের হাতে-কলমে পাঠের সুযোগ করে দেয়। এলাকায় যে-সব গাছপালা, জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ রয়েছে, তাদের চেনার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি সম্পর্কে খুদেদের আগ্রহ বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, ভাম, কাঠবে়ড়ালি, বেজির মতো প্রাণীরা যে বিপন্ন, সেটাও বুঝতে শিখবে আগামী প্রজন্মের নাগরিকেরা।
রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদেরও এমন প্রকল্প রয়েছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল জানান, স্কুলগুলি এক দিনের শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য আবেদন ও বাজেট জমা দিলে পুরো খরচ পর্ষদই বহন করে। সেই প্রকল্পকেও এ বার আরও ব়়ড় আকারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।