Beaver Blood Moon

গ্রহণের সৌজন্যে মুগ্ধতা ছড়াল হেমন্তের রাঙা চাঁদ

গ্রহণমুক্তির পথে চাঁদের প্রাকৃতিক শোভা যেমন বহু মানুষ এ দিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন, তেমনই কিছু মানুষ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও গ্রহণ নিয়ে নানা কুসংস্কার ছড়িয়েছেন নেট দুনিয়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৯
Share:

শহরের আকাশে চন্দ্রগ্রহণ। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দিনান্তের আলো তত ক্ষণে আসন্ন সন্ধ্যার ডানায় মুখে লুকিয়েছে। গোধূলি পেরিয়ে নামছে আঁধার। এমন সময়ে আবার এক আলোর আভাস দিল কে! দিগন্তের কাছাকাছি দেখা গেল এক টুকরো লালচে আভা। কয়েক মিনিট যেতেই বোঝা গেল, অবগুণ্ঠন সরিয়ে বেরিয়ে আসছে পূর্ণিমার চাঁদ। মঙ্গল-সন্ধ্যার সেই চাঁদের রং যেন কবির আঁকা সলজ্জ নববধূর মতো। রাঙা! গোধূলির পরেও এই অভিনব আলো সেই চাঁদের।

Advertisement

মঙ্গলবার ছিল রাসপূর্ণিমা। একই সঙ্গে ছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তবে গ্রহণ যখন শুরু হয়, তখনও ভারতের আকাশে চন্দ্রোদয় হয়নি। পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়া দেশের বেশির ভাগ জায়গা থেকে পূর্ণগ্রাসের শেষাংশও দেখা যায়নি। সে-দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গবাসীর কপাল ভাল বলতে হয়। আশ্চর্য আলোয় রাঙা হৈমন্তী চাঁদের দেখা মিলেছে এ দিন।

উদয়ের পর থেকে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রহণমুক্ত হয়েছে চাঁদ। মধ্যগগনের দিকে যত এগিয়েছে চাঁদ, ততই কমেছে তার রাঙা-ভাব। মোলায়েম আলো নিয়ে আকাশে ফুটে উঠেছে পূর্ণিমার থালার মতো গোল, চিরদিনের জ্যোৎস্নানাথ চাঁদ।

Advertisement

পৃথিবীর ছায়া থেকে চাঁদের বেরিয়ে আসার এই দৃশ্য এ দিন সন্ধ্যায় ছাদে কিংবা বারান্দায় বসে চা-কফি-চানাচুর সহযোগে উপভোগ করেছেন অনেকেই। এমনই এক জনের কথায়, “চন্দ্রগ্রহণ তো বার বার দেখেছি। কিন্তু এই হেমন্তের সন্ধ্যায় মায়াবী চাঁদের আলো অতুলনীয়।”

এ দিন চন্দ্রোদয়ের সময় চাঁদ কেন রাঙা হয়ে উঠল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজ়িশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের প্রাক্তন অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানান, এর পিছনে আছে আলোর প্রতিসরণের কারসাজি। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি। তাই বিচ্ছুরণ কম। সেই কারণেই সূর্য বা চাঁদ দিগন্তের কাছাকাছি থাকলে লাল দেখায়।

গ্রহণমুক্তির পথে চাঁদের প্রাকৃতিক শোভা যেমন বহু মানুষ এ দিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন, তেমনই কিছু মানুষ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও গ্রহণ নিয়ে নানা কুসংস্কার ছড়িয়েছেন নেট দুনিয়ায়। বলা হয়েছে, গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া কিংবা বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ। এমনকি, গুগল সার্চ করতে গিয়েও সেই কুসংস্কার ভেসে উঠতে দেখেছেন অনেকে। চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্নের অর্ধশতক পেরিয়েও সমাজে এই কুসংস্কার ছড়ানোর ঘটনায় বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানকর্মীদের অনেকে বিস্মিত, ব্যথিত। পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সের অধিকর্তা অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গ্রহণের বিজ্ঞানসম্মত দিক নিয়ে সরব হয়েছেন ফেসবুকে।

বিজ্ঞানীরা জানান, গ্রহণ আসলে মহাবিশ্বের আলো-ছায়ার কারসাজি। সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী হাজির হলে পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদ সাময়িক ভাবে ঢাকা পড়ে। তাকেই বলে চন্দ্রগ্রহণ। একই ভাবে পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে চাঁদ এসে গেলে তার ছায়া সূর্যকে সাময়িক ভাবে ঢেকে দেয়। তাকে বলা হয় সূর্যগ্রহণ। পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণ এবং অমাবস্যায় সূর্যগ্রহণ কোনও বিরল ঘটনা নয়। এর সঙ্গে কোনও বিপদ-বিপত্তিরও সম্পর্ক নেই। অনেক বিজ্ঞানকর্মীর বক্তব্য, এই বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যাকে আড়াল করে এক দল মানুষ এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে বিকৃত করে কুসংস্কার ছড়িয়ে সমাজকে পিছনের দিকে ঠেলে দিতে চান। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগেও কেন সমাজের তথাকথিত শিক্ষিতদের অনেকে সেই অপপ্রয়াসের ফাঁদে পড়ছেন, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement