‘মাই মিউজিক মাই রাইটস’
সঙ্গীতজ্ঞদের তাঁদের নিজস্ব সঙ্গীতের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগী ‘দ্য ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি লিমিটেড’ (আইপিআরএস)। গীতিকার, সুরকার এবং গান প্রকাশকদের জন্যে দেশ জুড়ে ‘মাই মিউজিক মাই রাইট’, ‘ক্রিয়েটর্স কানেক্ট’ নামক একটি কর্মশালা শুরু করেছে তাঁরা। কলকাতার ডলবি ল্যাবসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়েছে। গোটা দেশের সঙ্গীত নির্মাতাদের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে আইপিআরএস-এর এই উদ্যোগ।
ইওয়াই-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা, ‘দ্য মিউজিক ক্রিয়েটর ইকোনমি দ্য রাইজ অব মিউজিক পাবলিশিং ইন ইন্ডিয়া’, দেখিয়েছে ভারতে বার্ষিক ২০,০০০ নতুন গান তৈরি হলেও সঙ্গীত নির্মাতারা এখনও বহু বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থনৈতিক বাধা ও উন্নত সঙ্গীত নির্মাণে প্রয়োজনীয় দক্ষতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সঙ্গীত নির্মাতাদের সঙ্গে প্রায়শই ঘটে থাকে। এই সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে মাত্র ৬০ শতাংশ সঙ্গীতশিল্পী তাঁদের জীবিকা নির্বাহে সক্ষম হন। সঙ্গীত নির্মাতাদের শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে ও সঙ্গীত জগতে কাজ করার পরিসরকে পোক্ত করতে ‘মাই মিউজিক, মাই রাইটস’ কর্মশালায় জোর দেওয়া হয়েছে এ সব চ্যালেঞ্জের উপরে। আলোচনা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ইভেন্টে ডোমেন বিশেষজ্ঞ এবং প্রখ্যাত সঙ্গীত নির্মাতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও প্যানেলিস্টরা। উপস্থিত ছিলেন, মিউজিক ডিরেক্টর তথা গায়ক, লেবেল ওনার ও আইপিআরএস বোর্ড সদস্য জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সুরকার, গায়ক, গীতিকার, লেবেল ওনার, এডুকেটর, কবি উপালী চট্টোপাধ্যায়, গায়ক, গীতিকার, কম্পোজার ও কবি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (সিধু), গায়ক, গীতিকার, স্বাধীন শিল্পী কেশব দে। এ ছাড়াও ছিলেন হেড অব আর্টিস্ট ও লেবেল পার্টনারশিপ স্পটিফাই ইন্ডিয়ার পদ্মনাভন এনএস। ডলবি ল্যাবসের ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সিনিয়র ডিরেক্টর করণ গ্রোভার, মিউজিক কানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা সভাপতি কৌশিক দত্ত এবং ফোনোগ্রাফিক ডিজিটাল লিমিটেডের (পিডিএল) সিইও প্রশান্ত ডোগরা। এ ছাড়াও এই কর্মশালায় কলকাতা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাধীন শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আইপিআরএস -এর পূর্ব আঞ্চলিক প্রধান প্রসেনজিৎ রায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আইপিআরএস হল ভারতের সঙ্গীত কপিরাইট সোসাইটি, যেটি কপিরাইট আইন, ১৯৫৭-এর অধীনে নিবন্ধিত এবং সঙ্গীতের লেখক, সুরকার, প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ভারতের প্রায় ১৪ হাজার জন বিখ্যাত লেখক, সুরকার এবং সঙ্গীত প্রকাশকদের এর সদস্য হিসেবে গণনা করে। আইপিআরএস কপিরাইট আইন, ১৯৫৭-এর অধীনে বাদ্যযন্ত্রের কাজ এবং তার সদস্যদের দ্বারা নির্ধারিত সঙ্গীতকর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে অনুমোদিত। এই রাজস্বগুলি লাইভ পারফরম্যান্স এবং সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে কাজগুলির জন্য প্রশাসনিক খরচগুলি কেটে নেওয়ার পরে লেখকদের সংবিধিবদ্ধ রয়্যালটি-সহ এর সদস্যদের কাছে সংগ্রহ এবং বিতরণ করা হয়। এটি সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুধুমাত্র সেই সময় বাদে, যখন সিনেমা হলে একটি সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্মের অংশ হিসেবে দেখানো হয়।’’
আইপিআরএস -এর ইস্টার্ন জোনের মেম্বারশিপের প্রতিনিধি সৌরীশ সরকার বলেন, “আইপিআরএস -এর তরফে 'মাই মিউজিক, মাই রাইটস' এবং কপিরাইটস নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে স্পটিফাই, ডলবি এবং পেবেলের মতো বড় বড় সংস্থাগুলিও এসেছে। এক জন স্বাধীন শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত নির্মাতাদের কোন কোন বিষয়ের নজর দেওয়া প্রয়োজন, এই বিষয়গুলি নিয়েই আজকের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।’’
গায়ক, সুরকার, লেবেল ওনার এবং আইপিআরএস বোর্ড অফ ডিরেক্টর জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “এক জন সুরকার হিসাবে আমি দেখেছি সঙ্গীত নির্মাতারা অনেক জটিলতার মুখোমুখি হন। ‘মাই মিউজিক মাই রাইটস’-এর মতো উদ্যোগগুলি সঙ্গীত নির্মাতাদের শুধু যে শিক্ষিতই করবে তা নয়, বরং তাঁদের আইপি রক্ষা করতে এবং তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতেও সহায়তা করবে।’’
আগামী সপ্তাহগুলিতে সারা দেশের শহরগুলিতে আসন্ন কর্মশালার পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে আইপিআরএস-এর লক্ষ্য হল আরও বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনো এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত সঙ্গীতের সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা।