ফাইল চিত্র।
একটানা ছুটি ছ’শো দিনেরও বেশি। ‘অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স রিপোর্ট’ বা এপিআরে প্রাপ্তি শূন্য। তবু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘নির্দেশে’ পদোন্নতি! সেচ দফতরের এক আধিকারিকের এ-হেন পদোন্নতি কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন কর্মী শিবিরের বড় অংশ। অভিযোগ, ওই অফিসারের দীর্ঘ ছুটি ‘রেগুলারাইজ়’ করে শূন্য নম্বর পাওয়া এপিআর সংশোধন করতে হয়েছে ‘ঊর্ধ্বতন’-এর নির্দেশে। এর বিরুদ্ধে দফতরের কর্মী-অফিসারদের অনেকে সরব হয়েছেন, সরকারি নথিতে এই অনিয়মের উল্লেখ রাখা হচ্ছে!
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে কলকাতা হাই কোর্টের কাঠগড়ায় রাজ্য সরকার। ওই অনিয়মের ক্ষেত্রে তাতে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন কিছু সরকারি আধিকারিকও। অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে গিয়ে এমন অনেক নথিতে অফিসারদের সই করতে হয়েছে, যা এখন সিবিআই তদন্তের আওতায়। দোষ প্রমাণিত হলে সেই সব সরকারি অফিসারদেরও ঘোর সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ফলে এখন অনেক সতর্ক হয়েছেন তাঁরা।
সেচ দফতরের ওই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অবশ্য বছরখানেক আগেই। তখনও আদালতে এতটা মুখ পোড়েনি রাজ্য সরকারের। তত দিনে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই সে-বার সরকারি ক্ষেত্রে অনিয়ম নিয়ে অফিসারদের একাংশকে সরব হতে দেখা গিয়েছিল। তার আগে কখনও এমনটা হয়েছিল কি না, মনে করতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, ‘নিয়োগে অনিয়ম’-এর সাম্প্রতিক ‘ভয়’-ই কাজ করে থাকবে এর নেপথ্যে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পুলিশের একটি মামলায় রাজ্যের সেচ দফতরের দামোদর ডিভিশনের এক কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল ২০১২ সালের শেষ দিকে। ২০১৩ সালে সেই কর্মী কার্যত বেপাত্তা হয়ে যান। নথি বলছে, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছর থেকে সব মিলিয়ে ৬৭২ দিন ছুটি নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, অননুমোদিত এত দীর্ঘ ছুটি সহজে ‘রেগুলারাইজ়’ করার উদাহরণ তেমন একটা নেই। উল্টে সরকারি নিয়মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাসপেন্ড করা, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত, এমনকি তাঁকে ‘সার্ভিস ব্রেক’-এর সংস্থান রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই কর্মীর এপিআর জমা দিতে বলা হয় বিভাগীয় অফিসারদের। বিভাগীয় আধিকারিক লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন অফিসারকে জানিয়ে দেন, ২০১৪-১৫ সালে ওই কর্মী অফিসে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিলেন। তাই সে-বছরের রিপোর্টে দক্ষতা-দায়িত্ব এবং সততার নিরিখে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর শূন্য। তাঁর কোনও পারফরম্যান্স রিপোর্ট তৈরি হওয়ারই কথা নয়। অথচ তার পরেও ওই কর্মীর পারফরম্যান্স রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। এক আধিকারিক বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যদি সার্ভিস রেগুলারও হয়, সে-ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ‘সিনিয়রিটি’ দু’বছর পিছিয়ে যাওয়ার কথা।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে ওই কর্মীকে প্রোমোশন দেওয়া হলেও পরে ‘ভুল’ স্বীকার করে তাঁকে আবার আগের পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ফের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেটা কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এক আধিকারিক বলেন, “সরকারি নিয়মে কোনও কর্মীর পারফরম্যান্স ছ’মাস দেখা না-হলে তাঁর এপিআর তৈরি করা হয় না। তার পরেও ওই কর্মীর অনুপস্থিতির সময়কালের এপিআর তৈরির নির্দেশ কী ভাবে দেওয়া হল, বোঝা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, এ বার তিনি প্রোমোশন পেয়ে গেজেটেড অফিসারও হয়ে যাবেন!”
সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি দফতরের প্রধান সচিবকে গোটা ফাইলটি খতিয়ে দেখতে বলেছি।”