ফাইল চিত্র।
প্রথমে পাঁচ টাকা। তার পরে সাড়ে পাঁচ। এখন ছয় পেরিয়ে অনেক জায়গাতেই একটি ডিম কিনতে সাত টাকা গুনতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, মিড-ডে মিলে সপ্তাহে দু’দিন ডিম বরাদ্দ। কিন্তু এমন ভাবে দাম বেড়েছে যে, সপ্তাহে এক দিন পড়ুয়াদের পাতে ডিম দিতেই স্কুলের হিমশিম অবস্থা।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের মাথাপিছু দৈনিক বরাদ্দ চার টাকা সাতানব্বই পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু বরাদ্দ সাত টাকা পঁয়তাল্লিশ পয়সা। এই অবস্থায় সাত টাকা দিয়ে একটি ডিম কিনে কী ভাবে তাঁরা পড়ুয়াদের পাতে দেবেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়ানোয় সমস্যা সেখানেও। পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দের মধ্যে গ্যাসের দামও ধরা আছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।
করোনায় দু’বছর বন্ধ থাকার পরে স্কুল খোলার পরেই আবার দীর্ঘ গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছিল। দু’মাসের সেই গ্রীষ্মাবকাশের পরে পড়ুয়াদের এখন আরও বেশি পুষ্টি প্রয়োজন বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লাভপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখন পরীক্ষা চলছে বলে সব ছাত্রী আসছে না। তাই কোনও রকমে সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সব ছাত্রী স্কুলে আসতে শুরু করলে তা সম্ভব নয়। মনীষাদেবী বলেন, “এত দিন স্কুল বন্ধ থাকার সময় মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হলেও পড়ুয়ারা রান্না করা খাবার পায়নি। তাই পুষ্টিও হয়নি ঠিকমতো। গ্রামের গরিব মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টির অভাব খুবই প্রকট। সপ্তাহে দু’টি ডিম খুবই প্রয়োজন।”
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডার প্রশ্ন, দু’টি ডিম তো দূরের কথা, কিছু দিন পরে মিড-ডে মিল রান্না করার জন্য গ্যাস জ্বালানো যাবে তো? তিনি বলেন, “গ্যাসের দাম যখন ৪৫০ টাকার আশেপাশে থাকাকালীন মিড-ডে মিলের জন্য পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ যা ছিল, এখন গ্যাসের দাম যখন হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে, তখনও বরাদ্দ সেই একই আছে। গরিব পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কথা কি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার, কেউ ভাববে না?”
কয়েক জন শিক্ষক জানাচ্ছেন, আলুর দামও অনেকটা বেড়েছে। ফলে ডালের সঙ্গে আলুসেদ্ধ বা আলু চোখা দেওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, “মিড-ডে মিলের খরচের ৬০ শতাংশ কেন্দ্র দেয় আর রাজ্য সরকার দেয় ৪০ শতাংশ। চাল দেয় কেন্দ্র। বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বললে কেন্দ্র বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না বলে দোষারোপ করে রাজ্য। আবার কেন্দ্র বলে, রাজ্য সরকার বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না। এই দুইয়ের টানাপড়েনের শিকার হচ্ছে পড়ুয়ারা।” শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, “মিড-ডে মিলের বরাদ্দের অনুমোদন দেয় অর্থ দফতর। অর্থ দফতর বিষয়টি দেখছে।”