ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল তথা আচার্য সি ভি আনন্দ বোসের তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অবৈধ আখ্যা দেওয়া আদতে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করতে বিজেপির বৃহত্তর পরিকল্পনার অঙ্গ বলে রবিবার সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সভার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর মন্তব্য, “বিজেপির এজেন্ট হিসেবে পরিকল্পনামাফিক উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করছেন রাজ্যপাল।’’
অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “রাজ্যপাল রাজ্যের শিক্ষাকে তৃণমূলের দলীয়করণ হওয়া থেকে আটকাতে চেষ্টা করছেন, তাই ওঁর উপরে এত রাগ তৃণমূলের।”
তবে যাদবপুরের সমাবর্তন এবং তাতে প্রদত্ত ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে রাজ্যপালের তরফে তোলা প্রশ্ন এ দিন সংশ্লিষ্ট সকলেই অমূলক বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা) এবং রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলও এ বিষয়ে একমত। সদ্য প্রাক্তন অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “এখানে অবৈধ শব্দটাই অবৈধ। আচার্য যা বলছেন, তার কোনও আইনি বা নৈতিক ভিত্তি কিছুই নেই। সমাবর্তনের প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ধাপে কর্ম সমিতি, আর্থিক কমিটি বা সমাবর্তনের অনুষ্ঠানেও আচার্যের প্রতিনিধিরা ছিলেন।” বরংরাজ্যপাল সই না করায় এক জনকে ডিএসসি ডিগ্রি দেওয়া যায়নি বলে তিনি মনে করান।
বোলপুরের সভার পরে ব্রাত্য এ দিন যাদবপুর সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সমাবর্তন কবে করেছেন, তার হিসেব এখন কেন চাওয়া হচ্ছে? সেই হিসেব কোথায় জমা দেওয়া হবে?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যিনি উপাচার্যই নেই তাঁকে উপাচার্য থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে! আবার উপাচার্য হিসেবে শো-কজ়ও করা হচ্ছে! কেন করা হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালের সুস্থতাও কামনা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রাক্তন এবং বর্তমান উপাচার্যদের সংগঠন দ্য এডুকেশনিস্টস ফোরামের অন্যতম মুখ যাদবপুরের প্রবীণ অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, “এ বার বোঝা গেল, রাজ্যপাল একাই অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে যাদবপুরে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করছেন।” জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, “আমরা একাধিক বার স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে আচার্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং বিকাশ ভবনকেও চিঠি দিয়েছি। এক দিকে, রাজ্যপাল তথা আচার্য স্থায়ী উপাচার্য বসাচ্ছেন না, অন্য দিকে যাদবপুরের স্থায়ী ডিন, রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার থেকে বিভিন্ন বিভাগীয় অধ্যাপক নিয়োগ থমকে থাকায় রাজ্য সরকারেরওদায় রয়েছে।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য অবশ্য এদিন বোলপুরে এ বছরই রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
আগামী ২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শুনানি। যাদবপুর-সহ ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য থমকে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখনও রাজ্যপালের তরফে একতরফা ভাবে কাউকে স্থায়ী উপাচার্য করা সম্ভব নয়। তবে তাঁর অপছন্দের কাউকে উপাচার্য পদে বসাতে তিনি বাধা দিচ্ছেন। রাজভবনের তরফে অবশ্য এ দিন বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলা হয়নি।