শিক্ষার্থীর অভাবে ধুঁকতে থাকা স্কুলগুলি নিয়ে অবশেষে সমীক্ষায় নেমেছে শিক্ষা দফতর। প্রতীকী ছবি।
একেবারেই পড়ুয়া নেই যে-সব স্কুলে, সেগুলির অনুমোদন বাতিলের কথা বলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু পরামর্শ দিয়েছেন, যে-সব বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে, কাছে-দূরের অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে তাদের মিশিয়ে দেওয়া হোক।
শিক্ষার্থীর অভাবে ধুঁকতে থাকা স্কুলগুলি নিয়ে অবশেষে সমীক্ষায় নেমেছে শিক্ষা দফতর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু চলতি সপ্তাহেই বলেছেন, ‘‘কী করা হবে, সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমরা সমীক্ষার ফলাফল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেব। তার পরে এই ধরনের স্কুল নিয়ে পরবর্তী ধাপের কথা চিন্তা করা হবে।’’ শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গ্রাম ও শহরে স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনে শহর থেকে গ্রামেও শিক্ষক বদলি করা হতে পারে।
শিক্ষক শিবিরের একাংশের অভিযোগ, বদলির পোর্টাল উৎসশ্রীর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের বহু শিক্ষক শহরের স্কুলে চলে এসেছেন। গ্রামের অনেক স্কুলই এখন শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। উপরন্তু দীর্ঘ কাল শিক্ষক নিয়োগ না-হওয়ায় গ্রামের অনেক স্কুলের দশা আরও খারাপ হয়েছে বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।
বেগতিক দেখে উৎসশ্রী পোর্টাল বেশ কিছু দিন ধরেই বন্ধ রেখেছে সরকার। খোদ শিক্ষামন্ত্রী জানাচ্ছেন, আপাতত ওই পোর্টাল খোলার কোনও সম্ভাবনা নেই। রাজ্যের যে-সব স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা তিরিশের কম, তার একটা তালিকা সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিরিশের নীচে নেমে যাওয়া স্কুলের সংখ্যা ৮২০৭। তালিকাটি কি শিক্ষা দফতর থেকে প্রকাশিত হয়েছে? শিক্ষামন্ত্রী জানান, ওই তালিকা সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা নেই। তবে তাঁর দফতরেরই একটি সূত্রের দাবি, ওই ৮২০৭টি স্কুলের তালিকা করা হয়েছে শিক্ষা দফতর থেকেই। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কম পড়ুয়ার স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষা দফতর ওই ৮২০৭টি স্কুল বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বলে এআইডিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অভিযোগ। এমন পরিকল্পনার প্রতিবাদে এবং ওই ৮২০৭টি স্কুলের পরিকাঠামো বাড়ানোর দাবিতে ১০ মার্চ ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘শিক্ষার বেসরকারিকরণের গতি ত্বরান্বিত করতে ৮২০৭টি স্কুল বন্ধের পরিকল্পনা করছে সরকার।’’
উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকপদ প্রার্থীদের তরফে সুশান্ত ঘোষের দাবি, ‘‘ওই ৮২০৭টি স্কুলের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিক স্কুল আছে ১৩৬২টি। ওই সব উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া কমে তিরিশের নীচে নেমেছে শিক্ষকের অভাবেই। অথচ যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চার লক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমেছে। শমীক বলেন, ‘‘আমরা চাই, দ্রুত নিয়োগ হোক। বাংলার স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচাতে আদালতের ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে চাইছে মানুষ।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, চাকরিপ্রার্থীদের প্যানেল থেকে আগে নিয়োগের কথা বলেছেন বিচারপতি। স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা দিতে বলেছেন। সেটাই আসল কথা। আবার যেন সর্ষের মধ্যে ভূত না-থাকে! দেখা গেল, ১০০ জনকে চাকরি দিতে গিয়ে ৮০ জনই দু’নম্বরি উপায়ে ঢুকে গেল, সেটা যেন আর না-হয়।’’