—নিজস্ব চিত্র।
কেটে গিয়েছে এক যুগেরও বেশি সময়। এত দিনে আবার সামনে এল রিজওয়ানুর রহমানের অপমৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত অশোক টোডির নাম। অর্থনৈতিক অনিয়মের একটি মামলায় তাঁর নামে চার্জশিট দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
পিএমএল (প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং) আইনে এই চার্জশিট মূলত দেওয়া হয়েছে আয়কর দফতরের এক কর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তিনি বাজার থেকে প্রচুর টাকা ঘুষ নিয়ে সেই অর্থ অন্যত্র কাজে লাগিয়েছেন। টোডির বিরুদ্ধে ইডি-র অভিযোগ, তিনিও একটি ঘটনায় মোটা টাকা দিয়েছিলেন ওই আয়কর-কর্তাকে।
শনিবার যোগাযোগ করা হলে টোডি অবশ্য বলেন, “এই ধরনের কোনও চার্জশিটের কথা আমার জানা নেই। আমি কাউকে বেআইনি ভাবে কোনও টাকা দিইনি। আয়কর দফতর ২০১৩ সালে এক বার আমার সংস্থায় হানা দিয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের যে-অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর আমি আয়কর সংক্রান্ত আদালতে লড়াই চালিয়েছি। তার পরে বিষয়টি মিটে গিয়েছে।”
আদালতে ইডি-র পেশ করা নথি অনুযায়ী, ২০১৭ সালে হেয়ার স্ট্রিট থানা গোবিন্দ আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা (কেস নম্বর ১৯০/২০১৭) করে। তাঁর দফতরে হানা দিয়ে প্রচুর হিসাব-বহির্ভূত টাকার হদিস পাওয়া যায়। সেখান থেকে উঠে আসে ওই আয়কর-কর্তার নাম। অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ় ভ্যালির তছরুপ কাণ্ডে অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তির নামও পাওয়া যায় সেখানে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ বলেই কলকাতা পুলিশ বিষয়টি ইডি-র কাছে পাঠায়।
আদালতে সম্প্রতি জমা দেওয়া ইডি-র চার্জশিট অনুযায়ী, টোডির লাক্স কোজ়ি সংস্থায় আয়কর হানার পরে অভিযুক্ত ওই আয়কর-কর্তাকে মোটা টাকা ঘুষ দেওয়া হয়। সেই ঘটনায় টোডিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করে ইডি। পরে অন্য এক জন ইডি-র কাছে বয়ান দিয়ে ওই লেনদেনের কথা জানান। গত সপ্তাহে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডি-র পেশ করা চার্জশিটে ওই আয়কর-কর্তা ছাড়াও গোবিন্দ আগরওয়াল, অশোক টোডির নামে আছে। সেই সঙ্গে ওই চার্জশিটে নাম রয়েছে আরও ২৩টি সংস্থার।
২০০৭ সালে রিজওয়ানুরের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয় বাংলা। টোডির মেয়ে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে গরিব ঘরের ভিন্ধর্মী রিজের বিয়ে টোডি পরিবার মেনে নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। রিজের ঘর থেকে বাপের বাড়ি ফিরে যান প্রিয়াঙ্কা। যোগাযোগ বন্ধ করে দেন রিজের সঙ্গে। ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পাতিপুকুরে রেললাইনের ধারে রিজওয়ানুরের দেহ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তদন্তে নেমে অশোক, তাঁর ভাই প্রদীপ টোডি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে চার্জশিট দেয় সিবিআই। মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সেখানে ওই মামলায় খুনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান অশোক। তবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার যে-মামলাটি সিবিআই দায়ের করেছিল, সেটি এখনও চলছে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে।
রিজ মামলায় রেল পুলিশের যে-অফিসার প্রথম তদন্তকারী অফিসার ছিলেন, ২০০৯ সালে রহস্যজনক ভাবে খুন হয়ে যান তিনি। রিজের ভাই রুকবানুর পরে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতে বিধায়ক হন। আর টোডি পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা এখন বিদেশে।