জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বাঁ দিকে) এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দুর্নীতির মামলায় দু’জনেই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। আবার দু’জনেই এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (যিনি বালু নামেই ঘনিষ্ঠমহলে সমধিক পরিচিত) এবং নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র উপরে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে ইডি। তবে সরকারি হাসপাতালে দু’জনকে নজরবন্দি করার জন্য ভিন্ন দু’টি উপায় বার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
সুজয়কৃষ্ণ বর্তমানে এসএসকেএমের হৃদ্রোগ বিভাগের ইনটেনসিভ করোনারি কেয়ার ইউনিট (আইসিসিইউ)-এ ভর্তি রয়েছেন। কেবিনের বাইরে পাহারায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ-এর জওয়ানেরা। অন্য দিকে, ওই হাসপাতালেরই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জ্যোতিপ্রিয় যে কেবিনে রয়েছেন, তার বাইরে আদালতের নির্দেশেই সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে ইডি। ফলে অসুস্থ জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে কে বা কারা দেখা করতে আসছেন, তার সব খবরই থাকছে ইডি আধিকারিকদের কাছে।
গত শুক্রবার সুজয়কৃষ্ণকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে রেখেছিল ইডি। শুক্রবার সকালে এসএসকেএমে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকেরা। পৌঁছয় একটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণকে শুক্রবার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি ইডি। এসএসকেএম সূত্রে জানা যায়, শারীরিক পরিস্থিতির ‘অবনতি’ হওয়ায় তাঁকে আইসিসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল যে, শুক্রবারই সুজয়কৃষ্ণের গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে চায় তারা। তাঁর গলার স্বরের নমুনা অনেক দিন ধরে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। কিন্তু বার বার তাতে বাধা আসছে বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও ইডি প্রশ্ন তুলেছে। অন্য দিকে, এসএসকেএম থেকে জানানো হয়, গলার স্বরের নমুনা দিতে প্রস্তুত নন সুজয়। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তাই তাঁর স্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি এত দিন। প্রসঙ্গত, নিয়োগ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ইডি একটি বিশেষ অডিয়ো রেকর্ডিং পায়। সেখানে সুজয়ের গলার স্বর শোনা গিয়েছে বলে দাবি। কিন্তু তা প্রমাণসাপেক্ষ। সেই কারণেই সুজয়ের গলার স্বরের সঙ্গে ওই নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।
অন্য দিকে, ১৪ দিন ইডি হেফাজতে থাকার পর প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে। গত ১৬ নভেম্বর নিম্ন আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের। অসুস্থতার কারণে তাঁকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির করানো হয়েছিল। সে দিন তিনি বিচারককে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বাঁচতে দিন।’’ তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর ৩৫০-এর বেশি সুগার। হাত-পা কাজ করছে না। এই শুনানির পরের দিনই প্রেসিডেন্সি জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়। কাশি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার পর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।