সংঘর্ষ এড়ানো গিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে দমদমে দু’দিক থেকে দু’টি ট্রেন কী ভাবে একই লাইনে চলে এসেছিল, সেই ধাঁধার সুরাহা হয়নি। ওই প্রশ্নের জবাব পেতে নিয়মমাফিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্ব রেল। সোমবার ওই কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার জে সি অগ্রবাল।
রেলেরই একাংশের মতে, ওই ঘটনায় ধাঁধা বিশেষ কিছু নেই। এক বা একাধিক লোকের গাফিলতি বা ভুলে ব্যাপারটা ঘটেছে বলে স্বীকার করে নিলে রহস্যের কিছু থাকেও না। কিন্তু ওটা যে কোনও ‘ভুল’-এরই পরিণাম, রেল-কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছেন না। যদিও ঘটনার দিনেই প্রাথমিক ভাবে তিন স্টেশনমাস্টারকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আর পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এ দিন জানিয়ে দেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যাঁরা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাঁদের বিধিমাফিক শাস্তি দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ দমদম স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল আপ রানাঘাট লোকাল। ডাউন ডানকুনি লোকাল আচমকাই ওই লাইনে চলে আসে। কিছুটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়িয়ে যায় সে। রেল-কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনাকে দু’টি লোকালের ‘মুখোমুখি’ হওয়া বলতে চাননি। তাঁরা প্রথমে বলেছিলেন, সমস্যা সিগন্যালে। রেল ক্রসিংয়ে যেটা ঘটতেই পারে।
প্রশ্ন উঠছে, কোনও গাফিলতি বা ভুল যদি না-ই থাকবে, তা হলে ঘটনার পরেই তিন স্টেশনমাস্টারকে সাসপেন্ড করা হবে কেন?
জবাব দেননি রেলকর্তারা। তাঁরা শুধু বলছেন, রেলকর্তাদের কথায়, কোনও কর্মী মিথ্যা বলছেন কি না বা এর পিছনে অন্য কোনও ঘটনা রয়েছে কি না, সেটা বুঝতেই তদন্ত। আর তদন্তের স্বার্থেই তিন স্টেশনমাস্টারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রেলকর্তারা স্বীকার করছেন, ডানকুনি লোকালকে ওই লাইনে ঢুকিয়ে দেওয়ায় সেই সময় দমদম স্টেশনের কোনও প্ল্যাটফর্মেই ট্রেনটিকে দাঁড় করানো যায়নি। লাইনেই দাঁড় করিয়ে রেখেই নামাতে হয়েছে যাত্রীদের। ফলে ট্রেন চলাচলে যাত্রী-নিরাপত্তার প্রাথমিক নিয়মকেই জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে।
যদি কোনও ভুলই না-হয়ে থাকে, তা হলে এমন ঘটনা ঘটল কেন?
তদন্তের কথা বলেই প্রশ্ন এড়াচ্ছেন রেলকর্তারা। তবে রেল সূত্রের খবর, দমদমে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে আপ রানাঘাট লোকাল দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময় ডানকুনির দিক থেকে পরপর চারটি ট্রেন দমদমে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রথমে ছিল ডানকুনি লোকাল। তার পিছনেই ছিল সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস এবং অন্য দু’টি ট্রেন। দমদম কেবিনের বক্তব্য, প্রথমে সম্পর্কক্রান্তির জন্য লাইন ‘ক্লিয়ার’ চেয়েছিল বরাহনগর স্টেশন। যে-হেতু সম্পর্কক্রান্তি দমদমে থামে না, তাই তাকে লাইন দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বরাহনগর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাঁরা লাইন ক্লিয়ার চেয়েছিলেন ডানকুনি লোকালের জন্য। দমদমে ওই ট্রেনের
থামার কথা। দমদমের কাছে পৌঁছে প্ল্যাটফর্ম না-পেয়ে ডানকুনি লোকালের চালক অবাক হয়ে থেমে যান। কী ভাবে এটা হল, কেন লাইন ফাঁকা করা হয়নি, তার জবাব মিলছে না। রেলকর্তাদের বক্তব্য, ভুল যদি কিছু হয়েও থাকে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল না। কারণ, ডানকুনি লোকাল
যদি ওখানে না-ও থামত, আরও কিছুটা এগিয়ে এসে রানাঘাট লোকালের পাশের লাইন দিয়ে সে বেরিয়ে যেতে পারত।