অস্ত্রোপচারের মধ্যেই কেঁপে উঠল আলো

চিকিৎসক, নার্সদের মুখে মাস্ক, হাতে ছুরি কাঁচি। অপারেশন টেবিলে শুয়ে রয়েছেন এক প্রসূতি, উপরে শক্তিশালী আলো। হঠাৎই ঘরটা দুলে ওঠে। কাচের বোতলে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রের মধ্যে ঠোকাঠুকির শব্দ শুরু হয়। নিভে যায় আলো। ভূমিকম্প শুরু হয়েছে টের পেয়েও অন্ধকার ঘরে কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় অস্ত্রোপচার। কয়েক মিনিট পরে ফের আলো জ্বলে ওঠায় হাফ ছেড়ে বাঁচেন চিকিৎসক শাশ্বতী হালদার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:১৩
Share:

চিকিৎসক, নার্সদের মুখে মাস্ক, হাতে ছুরি কাঁচি। অপারেশন টেবিলে শুয়ে রয়েছেন এক প্রসূতি, উপরে শক্তিশালী আলো। হঠাৎই ঘরটা দুলে ওঠে। কাচের বোতলে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রের মধ্যে ঠোকাঠুকির শব্দ শুরু হয়। নিভে যায় আলো। ভূমিকম্প শুরু হয়েছে টের পেয়েও অন্ধকার ঘরে কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় অস্ত্রোপচার। কয়েক মিনিট পরে ফের আলো জ্বলে ওঠায় হাফ ছেড়ে বাঁচেন চিকিৎসক শাশ্বতী হালদার। ফের শুরু হয় অস্ত্রোপচার। মঙ্গলবার দুপুরে ভূমিকম্পের সময় ঘটনাটি দিনহাটা হাসপাতালের।

Advertisement

একই সময়ে এক মহিলার জরায়ুর অস্ত্রোপচার চলছিল তুফানগঞ্জ হাসপাতালেও। চিকিৎসক ঠাকুরদাস পাল সহ ছয় জন স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে ছিলেন। রোগিণী অবশ্য সংজ্ঞাহীন ছিলেন। কম্পন শুরু হতেই চমকে ওঠেন সবাই। কেউ কেউ আতঙ্কে সাময়িক দিশেহারা হয়ে পড়েন। সে সময় চিকিৎসক হুঁশিয়ারি দেন, কেউ বাইরে যাবেন না। চিকিৎসক বলেন, “অপারেশন থিয়েটারের আলো, রোগিণীর স্যালাইন রীতিমতো দুলছিল। কিন্তু দুই ঘণ্টার অপারেশনের মাঝপথে রোগিণীকে ফেলে বাইরে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারিনি। ভয় একটু হয়েছিল ঠিকই। তবে রোগিণীর পাশে থাকাই তখন আমাদের কর্তব্য মনে হয়েছিল।”

এ দিন দুপুরে ভূমিকম্পের সময় উত্তরবঙ্গ জুড়েই কোনও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার থমকে গিয়েছে, কোথাও স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়েই রোগীরা ওয়ার্ড থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছেন। তবে শিলিগুড়ি থেকে বালুরঘাট, সব হাসপাতালেই রোগীর আত্মীয় পরিজনদেরই বেশি করে আতঙ্কগ্রস্ত দেখিয়েছে। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে এদিন ভূমিকম্পের জেরে আতঙ্ক ছড়ায়। অপারেশন থিয়েটারের দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন বিভাগ থেকেও রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে বাইরে চলে আসে। মেডিক্যাল কলেজের পুরুষ সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিক্যাল বিভাগ থেকে রোগীরা ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। অস্ত্রোপচার থমকে গিয়েছে এখানেও। হাসপাতালের চিকিৎসক দুষ্মন্ত বর্মন জানিয়েছেন, এক যুবকের হাতে অস্ত্রোপচার চলছিল। কম্পনের জন্য অস্ত্রোপচার সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়।

Advertisement

এ দিন দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভূমিকম্প অনুভূত হতেই রোগীদের একাংশ ও তাঁদের পরিবারের লোকজন আতঙ্কে বিভিন্ন ওয়ার্ড ছেড়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভিড় করেন। তবে হাসপাতালের দোতলায় মহিলা সার্জিক্যাল ও প্রসূতি বিভাগে রোগীরাও নীচে নেমে পড়েন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ বাইরে বেরিয়ে আসেন। ইসলামপুর হাসপাতালের সামনে বৃষ্টি মাথায় সদ্যোজাতদের আগলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মায়েদের। ইসলামপুরের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রুম্পা দাস, রিজুয়ানু বানুরা বলেন, ‘‘হঠাৎই দেখলাম সকলে দৌড়তে শুরু করল। বাচ্চাকে নিয়েই তাই নেমে আসি। বৃষ্টি চলছিল। কিন্তু মাথায় বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে আশঙ্কায় কোলের শিশুকে নিয়েই রাস্তায় নেমে আসি।’’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন অনেকে। আচমকা ভূমিকম্প হতেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। ভূমিকম্পের পরেও অনেকে ওয়ার্ডে ফিরতে ভয় পেয়েছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি ভবনের তিন তলায় আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল। ভূমিকম্প হতে মাঝ পথে তা ভেস্তে যায়। ছাত্রী, শিক্ষিকারা ভয়ে আর কেউ তিন তলায় উঠতে চাননি। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের রোগীরা ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বেরিয়ে আসেন চিকিৎসক, নার্সরাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভূমিকম্পে জখম ব্যক্তিদের হাসপাতালে আনা হতে থাকে। এ দিন তাদের ১১ জনকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তার মধ্যে পীদা রাই নামে ট্রেজারি অফিসের এক মহিলা কর্মী জ্ঞান হারান। তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement