হাটসেরান্দি গ্রামে অনুব্রতের বাড়ির দুর্গামন্দির। নিজস্ব চিত্র
কানু বিনে গীত হয় না। কেষ্ট বিনেই বা জাঁকের পুজো হবে কী ভাবে!
প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন বীরভূমের নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামের এক প্রৌঢ়। বললেন, ‘‘প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস আমাদের গ্রামে। গ্রামে মোড়ল পরিবারের দুর্গা ছাড়াও একটি সর্বজনীন পুজো মিলিয়ে আরও ১৮টি পুজো হয়। কিন্তু, মোড়ল বাড়ির দুর্গাপুজো বিশেষ। কেষ্টদা ক্ষমতার শীর্ষে আসার আগে কে চিনত এই গ্রামকে?’’
হক কথা। হাটসেরান্দির আজকের উন্নতি ওই ‘মোড়ল’ অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরেই, এক বাক্যে বলছেন গ্রামের মানুষজন। সেই অনুব্রতই এ বার পুজোয় থাকবেন না। যদিও পুজো তাতে বন্ধ হবে না। বরং হাটসেরান্দি গ্রামের মন্দিরে এ বারও নিয়ম মেনে হবে ‘মোড়ল’ বাড়ির দুর্গাপুজো। রঙের কাজ শেষ। সাজ পরানোর আগে প্রতিমা কাপড় দিয়ে ঢেকে বন্ধ করে রাখা দুর্গা মন্দির। কিন্তু, বাড়ির মেজ ছেলে অনুব্রত নেই বলে উচ্ছ্বাসও বিশেষ নেই। তাঁর হাত ধরেই গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন পারিবারিক পুজো ‘বিখ্যাত’ হয়েছে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, পুজোর ক’দিন সপরিবার গ্রামে আসতেনই ‘কেষ্টদা’। তখন তিনি একেবারে ঘরোয়া মানুষ। প্রতি বছর এই পুজোয় শামিল হতেন মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, ব্লক নেতা থেকে গ্রামের মানুষ। পুজোর ক’দিন এলাহি খাওয়াদাওয়া চলত। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে চিংড়ি, ইলিশ, ভেটকি আসত। খাসির মাংস হত। সঙ্গে হরেক মিষ্টি। অনুব্রত জেলবন্দি থাকায় তেমন কোনও আয়োজন হচ্ছে না এ বার। জেলার তৃণমূল নেতারা বলছেন, ‘‘এ বার ওখানে গিয়ে ওঁর পরিবারকে বিব্রত করার কোনও মানে নেই।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মোড়ল’ বাড়ির পুজো নামে খ্যাত হওয়া ওই পারিবারিক পুজোর পিছনে রয়েছে অনুব্রতের রাজনৈতিক উত্থানও। গ্রামের আদি বাড়িতে না থাকলেও পরিবারের পুজো ও গ্রামের প্রতি তাঁর বরাবরের টান ছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁর পরিজনেরা। পারিবারিক দুর্গা মন্দির থেকে শুরু করে গোটা এলাকার উন্নতিতেই অনুব্রতের হাত ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। এখনও পুজো পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন অনুব্রতের তিন ভাই, তিন বোন, তাঁদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন সকলেই। যদিও মধ্যমণি হয়ে থাকতেন কেষ্টদাই।