১১ বছর জেলে থাকার পরে জামিন পেলেন দমদমের দুলাল

হত্যাপরাধে তিনি জেলে ঢোকার পরে এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ এগারো বছর কারা অন্তরালে কাটিয়ে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেতে চলেছেন সিপিএমের দমদম আঞ্চলিক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। ২০০২-এর ৪ মার্চ দমদমের সিঁথিতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। তাতে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হয়েছিলেন দুলালবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৬
Share:

তখন দুলাল। ২০০২-এ জেলে যাওয়ার সময়। ফাইল চিত্র

হত্যাপরাধে তিনি জেলে ঢোকার পরে এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ এগারো বছর কারা অন্তরালে কাটিয়ে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেতে চলেছেন সিপিএমের দমদম আঞ্চলিক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে।

Advertisement

২০০২-এর ৪ মার্চ দমদমের সিঁথিতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। তাতে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হয়েছিলেন দুলালবাবু। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় বছরের মাথায় আলিপুর সেশন কোর্টের তদানীন্তন নবম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক গোপালচন্দ্র সরকার দুলালবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সিপিএম তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে।

এবং সেই ইস্তক দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিকানা কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার যেখান থেকে তিনি জামিনে ছাড়া পেতে পারেন। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট যেখানে তাঁর জামিনের আর্জি নাকচ করেছে, সেখানে শীর্ষ আদালত কীসের ভিত্তিতে জামিন মঞ্জুর করল?

Advertisement

ওঁর কৌঁসুলিরা জানাচ্ছেন, ২০০৩-এর ২৯ অগস্ট আলিপুর কোর্টে দুলালবাবুর যাবজ্জীবন হওয়ার পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করা হয়েছিল। তাতে দুলালবাবুর জামিনের আবেদনও ছিল। কিন্তু মামলাটি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে উঠতে-উঠতে এগারো বছর গড়িয়ে গিয়েছে। শেষমেশ এ বছরের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুলালবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে দুলালবাবু সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে এ দিন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সুবিচারে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হল।

সর্বোচ্চ আদালত অবশ্য মূল মামলাটি হাইকোর্টের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে। দুলালবাবুর কৌঁসুলি জ্যোতির্ময় অধিকারী ও অমোজিৎ দে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি তাঁরা বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে জমা দেবেন। তার পরে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাবেন তেষট্টি বছরের দুলালবাবু, জেলে ঢোকার আগে পর্যন্ত এলাকায় যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত ছিল না। প্রশাসন ও সিপিএম-সূত্রের অভিযোগ: নিজের খাসতালুকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাটির। যার মধ্যে তোলাবাজি থেকে শুরু করে দমদম স্টেশনের আশপাশে অবৈধ প্রোমোটারি বা ট্রেনে চোরাচালান কিছুই বাদ ছিল না। এবং তিনি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর লোক হওয়ার সুবাদে অনেক সময়ে পুলিশও সব জেনে-বুঝে হাত গুটিয়ে বসে থাকত।

যেমন থাকতে চেয়েছিল জোড়া খুনের ঘটনা সম্পর্কে। ২০০২-এর ৪ মার্চ রাতে দমদমের নেয়ারাবাগানের মাঠে খুন হন স্থানীয় দুই যুবক চন্দন চক্রবর্তী ও সঞ্জীব গোস্বামী। তদন্তে জানা যায়, ওঁদের পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে মেরে দেহ দু’টি দমদম স্টেশনের রেললাইনে ফেলে আসা হয়েছিল। আঙুল ওঠে দুলাল-গ্যাংয়ের দিকে। চন্দনবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা চক্রবর্তী এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ প্রথমে দুলালবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে অভিযোগ গ্রহণে বাধ্য হয়। দুলালবাবুর হয়ে তখন অনেক সিপিএম নেতা সরব হলেও তদানীম্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘কড়া মনোভাব’ দেখে শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

সে সময়ে সিপিএমের দমদম-কাশীপুর জোনাল কমিটির সদস্য দুলালবাবু সিটু-প্রভাবিত রেল হকার্স ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদকও বটে। আলিপুর কোর্টে দুলালবাবুর সাজা ঘোষণার পরেই সিপিএম তাঁকে বহিষ্কার করে। দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ায় স্থানীয় বহু বাসিন্দা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে জানিয়েছিলেন, দমদম-কাশীপুরে শান্তি ফিরল। জামিনের খবর শুনে ওঁরা কী বলছেন?

এলাকাবাসীর বক্তব্য, যা-ই হোক না কেন, জোড়া খুনের সন্ত্রাসের দিন আর ফিরতে দেওয়া হবে না। দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানুষ আর বরদাস্ত করবে না। কলকাতা পুরসভার সংশ্লিষ্ট ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেনের কথায়, “দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এখানে গণতন্ত্র, শান্তি শিকেয় উঠে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে ফেরানো হয়েছে। কোনও ভাবে তা ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যাবে না।” দুলালবাবুর অনেক অনুগত এখন তৃণমূলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও শান্তনুবাবু তা মানতে চাননি।

দুলালবাবুর বাড়ির লোকের কী প্রতিক্রিয়া?

দুলালবাবুর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “যে দল থেকে উনি (দুলালবাবু) বহিষ্কৃত হয়েছেন, আমি সেই দলে আছি। নিয়ম অনুযায়ী দলের প্রতিনিধি হিসেবে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না। তবে পারিবারিক সদস্য হিসেবে বলতে পারি, আদালতের রায়ে আমরা খুশি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement