একাধিক পুরসভার ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অন্দরে। ফাইল ছবি।
চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত যে কোনও ফাইল সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। বছরখানেক আগে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবালয় থেকে ডিএলবি-র (ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ়)কাছে এমনই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছিল। ঝড় আসতে পারে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করতেই ওই বার্তাদেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়েই আপাতত জল্পনা চলছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে।
একাধিক পুরসভার ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অন্দরে। ডিএলবি থেকে পুরনো নিয়োগের ফাইল চেয়ে পাঠানো হয়েছে সচিবালয়, নগরায়ণ ভবনে। সেই সমস্ত ফাইল খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে দফতরের আধিকারিকদের। এমনকি, যে কোনও ধরনের ফাইল ছাড়ার আগে ভাল করে সব খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভায় চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগেই মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, পুরসভাগুলিতে গ্রুপ ডি ছাড়া আর সব ধরনের চাকরিতে নিয়োগের জন্য কমিশনের নির্দিষ্ট পরীক্ষাতেই বসতে হবে।
এই দুই নির্দেশের পিছনে কোনও বিশেষ ‘পর্যবেক্ষণ’ ছিল কি না, তা নিয়েই এখন কাটাছেঁড়া চলছে নগরোন্নয়ন দফতরে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে বিতর্কেজড়ানো পুরসভাগুলি ডিএলবি-র ঘাড়েবন্দুক রেখেই নানা পদে কর্মী নিয়েছে। কারণ, মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের নির্দেশের আগে পর্যন্ত পুরসভাগুলি সব ধরনের পদেই নিয়োগ করে থাকত ডিএলবি-রসঙ্গে যোগাযোগ রেখে। আর সেইসব নিয়োগের ব্যাপারে জানতেই পারতনা নগরায়ণ ভবন তথা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবালয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই দুর্নীতি হয়েছে কি না, সচিবালয় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর করা শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।
এমনও খবর শোনা যাচ্ছে যে, সল্টলেকে ডিএলবি-র অফিসে এক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা থেকে শুধু পুর কর্তৃপক্ষই নন, তাঁদের পারিষদদেরও প্রতিনিয়ত আনাগোনা লেগে থাকত। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনার খবর সচিবালয়ের দরজা পেরিয়ে পৌঁছতে থাকে। তার পরেই ডিএলবি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, চাকরিতে নিয়োগ-সহ যে কোনও ফাইল সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।
নিয়োগ-দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীলের সংস্থার সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভার যোগাযোগের তথ্যপ্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে ইডি।যেখানে অয়নের সংস্থার মাধ্যমে মজদুর-সহ নানা পদে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবালয়ের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে পুরসভাগুলির বিভিন্ন পদে নিয়োগে ডিএলবি-র কোন কোন আধিকারিকের স্বাক্ষর ছিল, তা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁদের কথায়, ‘‘পুরনো কিংবা অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে কথা বললে এ বিষয়ে অনেক তথ্য বেরোলেও বেরোতে পারে। তবে, আদৌ তা করা হবে কি না, তা দফতরের উপরমহলই একমাত্র ঠিক করবে।’’
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বুধবার জানান, মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এখন পুরসভায় চাকরি হয়। এ বার থেকে জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন বিভাগকে বলে দিয়েছি, কী কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সব দেখে নিতে। কী কাগজ আছে, তা-ও ভাল করে দেখে রাখতে। তবে এখনওপর্যন্ত আদালত কোনও নির্দেশ না দেওয়ায় আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাচ্ছি না। কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা পুরসভাগুলিকে দেখতেবলা হয়েছে।’’