ছবি মার্ভেল স্টুডিওর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।
কিছু যুদ্ধ অহরহ চলতে থাকে। কখনও নিজের সঙ্গে। কখনও কোনও অদৃশ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে। কখনও মনে হয় এই যুদ্ধটাই ভবিতব্য।
তিন দশক আগে ‘দ্য শ্যাডো লাইন্স’ উপন্যাসটিতে এমন এক যুদ্ধের কথা লিখেছিলেন অমিতাভ ঘোষ। কাহিনির নায়ক গোলপার্কের বাসিন্দা ছেলেটির বড় হওয়া, নির্মাণ জুড়ে সেই যুদ্ধের মহড়া। ইংল্যান্ডে প্রবাসী তুতো বোনের কাছে গল্পে শোনা নিক প্রাইস বলে তারই সমবয়সী একটি ছেলের কথা শুনেই বড় হয়েছে ছেলেটি। তার ঈর্ষা মেশানো কল্পনায়, নিক এক সুঠাম যুবক, বিদ্যেবুদ্ধি, পৌরুষের শৌর্য— সব কিছুতে তার থেকে ঢের এগিয়ে সে। সব সময়ে এই ভাবনা সত্যি হয় না। ভিতরের হীনম্মন্যতাবোধ ঝেড়ে ফেলতে পারলে বোঝা যায়, যতটা মনে হচ্ছিল, ঠিক ততটা অসম নয় সেই যুদ্ধ। তবু যে পক্ষের পরাজয়, সে পক্ষে থাকাটাই যেন অমোঘ নিয়তি।
উপনিবেশ-উত্তর বাঙালি এই অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত। বিশ্বায়নের অভিঘাতে ধ্বস্ত বাঙালিরও সঙ্গী এই টানাপড়েন। কাল, শুক্রবার হয়তো তা টের পাবেন কেউ কেউ। ‘অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজ়ে’র শেষ ছবির মুক্তি উপলক্ষে এখন ধূম জ্বরে কাঁপছে গোটা দেশ তথা কলকাতা। আর ঠিক তখনই একান্ত নিজস্ব অন্তরঙ্গ আবেগেরও মুখোমুখি ছাপোষা গেরস্ত বাঙালি। ঋতুপর্ণ ঘোষের গল্পে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এরও একই দিনে মুক্তি।
এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়, তাই ঘটছে। কৌশিক বলছিলেন, ‘‘কিছু করার নেই, মাল্টিপ্লেক্সগুলো মরিয়া চেষ্টা করেও আমাদের বড়জোর দুটো করে শো দিতে পারছে।’’ এর আগে বাহুবলী টু-র দাপটেও ধাক্কা খেয়েছিল কৌশিকের ‘বিসর্জন’! প্রসেনজিৎ-কৌশিকের যুগলবন্দিতে ‘দৃষ্টিকোণ’ও গত বছর অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজ়ের আর একটি ছবির ঘাড়ে-ঘাড়ে মুক্তি পায়। ‘অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম’ ছবিটি ঘিরে মাতামাতি কার্যত আকাশছোঁয়া। শো বাড়াতে মুম্বইয়ে একটি হল ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার কথাও শোনা যাচ্ছে। পর পর ছবি রিলিজ়ের যা লাইন, এবং বাংলা ছবি মুক্তির হলের সংখ্যা যা সীমিত, তাতে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এর পক্ষেও ছবি মুক্তির তারিখ এগোনো বা পিছোনো কিন্তু সম্ভব ছিল না।
‘‘আবার ঋতুপর্ণ-কৌশিকের রসায়ন সিনেমায় চেখে দেখবার সুযোগটাও আমি নিশ্চিত বাঙালির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’— বলছেন জ্যেষ্ঠপুত্র-এর নামভূমিকায় থাকা প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ও ঋত্বিকও দুই ভাইয়ের ভূমিকায়। চিরকেলে ঋতুপর্ণ-ঘরানার পারিবারিক ছবি, নানা জটিল চরিত্রের মারপ্যাঁচ। এটাও কিন্তু অনেকে দেখার অপেক্ষায়!’’— বলছেন প্রসেনজিৎ। একুশ শতকের বাঙালি মানেই এমন দুই নৌকায় সওয়ারি। পাইস হোটেলের ছ্যাঁচড়া আর পাঁচতারার পাস্তার আকর্ষণ— কোনওটাই প্রাণে ধরে ফেলতে পারে না! মেসিদের খেলা দেখতে দেখতেও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল আবেগে সে আচ্ছন্ন। প্রসেনজিতের ধারণা, ‘‘অ্যাভেঞ্জার্সের টানে ছোটরা মজলেও, পরিণত বয়সের আমবাঙালি জ্যেষ্ঠপুত্র-ও দেখতে যাবে।’’
নিজের ভিতরের সেই চেনা টানাপড়েনের মুখোমুখি বাঙালি।