প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের আবহে দ্রুত গতিতে বাড়ছে সংক্রমণ। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ অন্য করোনা বিধিগুলি বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১০ হাজার পেরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের একাংশের। শুক্রবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’-এর তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকেও চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে সংগঠনের তরফে।
সংগঠনের তরফে দুই চিকিৎসক— রাজীব পান্ডে, কৌশিক লাহিড়ি শুক্রবার নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সচেতনতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক কুণাল সরকারও।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৮১ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজীব বলেন, ‘‘গত এক মাসের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, আগে পশ্চিমবঙ্গে ৭ দিনে সংক্রমণ দ্বিগুণ হচ্ছিল। এখন ৩ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা কমানো না হলে এ বার দৈনিক সংক্রমণ ১০ হাজার পেরিয়ে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, গত ১ মার্চ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ১৭১। ১৫ মার্চ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৪। ২৫ মার্চ দৈনিক সংক্রমণ ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তার তিন দিনের মাথাতেই তা ৮০০ ছুঁয়ে ফেলে। এপ্রিলের প্রথম দিনেই রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১,২৭৪-এ পৌঁছে গিয়েছে।
সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে চিকিৎসক সংগঠনের তরফে লেখা হয়েছে, ‘বিধানসভা ভোটগ্রহণ চলাকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি যাতে কঠোর ভাবে মেনে চলা হয় তা বাধ্যতামূলক করতে হবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে’। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি, সমস্ত রকম ধর্মীয় উৎসব এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান ঘিরে জমায়েত নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। কৌশিকের কথায়, ‘‘সারা ভারতেই দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের ঢেউ ক্রমশ শীর্ষে উঠছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন ঠিক ভাবে কোভিড বিধি মানা হচ্ছে না।’’
কুণালের মতে, আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েক মাস চলে যাওয়ায় আমজনতার মধ্যে সাবধানতা কমে গিয়েছে। পাশাপাশি, ভোটের আবহে সংবাদমাধ্যমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে খবর কিছুটা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি যদি ৫ লক্ষ মানুষকে নিয়ে সপ্তাহে দু’বার র্যালি (জনসভা) করেন, কী করে মাস্ক পরার কথা বলবেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, এখনও পর্যন্ত করোনা বিধি অমান্যকারীদের জরিমানা বা গ্রেফতারের কথাটিই কেউ বলেননি। তবে নতুন করে লকডাউনের পক্ষপাতী নন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘আগের বার অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণে দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি ছাড়া অন্য কোনও ফল মেলেনি।’’
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ছুটির দিনেও পূর্ণোদ্যমে টিকাকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে দ্রুত টিকাকরণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এমনকি, কমবয়সিদেরও দ্রুত টিকা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।