গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর গর্ভপাতের জন্য আগে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে বলেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু সেই বোর্ড গঠন না করেই তড়িঘড়ি তরুণীর গর্ভপাত করান কলকাতার বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তার পরই এই বিষয়ে ওই চিকিৎসদের কাছে কৈফিয়ত তলব করে উচ্চ আদালত। শুক্রবার হাই কোর্টে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে একটি রিপোর্ট দিয়ে তড়িঘড়ি গর্ভপাত করানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন বাঙুরের চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়ে চিকিৎসকেরা আদালতকে জানিয়েছেন, যদি তাঁরা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে, তার পর বোর্ডের দেওয়া রিপোর্ট হাই কোর্টে জমা দিয়ে গর্ভপাত করানোর প্রক্রিয়া শুরু করতেন, তবে ওই তরুণীর শারীরিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারত। আরও বিলম্ব হলে ওই তরুণীর জীবনহানি হতে পারতও বলে আদালতকে জানান চিকিৎসকেরা। একই সঙ্গে চিকিৎসকেরা জানান, তরুণীর শরীর থেকে রক্তপাত হচ্ছিল। তাই দ্রুত তাঁর গর্ভপাত করানো প্রয়োজন ছিল।
চিকিৎসকদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, “আদালতের নির্দেশ কার্যকর না করে চিকিৎসকেরা এ ক্ষেত্রে ঠিক করেছেন, কোনও ভুল করেননি।” একই সঙ্গে তিনি জানান, আদালত ওই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না।
গর্ভপাত করাতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। বিচারপতি ভট্টাচার্যের বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। আদালত তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কমপক্ষে দুই সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে বলেছিল। বিচারপতি জানিয়েছিলেন, ওই বোর্ডই তরুণীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করবে এবং গর্ভপাত করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল।
অভিযোগ ওঠে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন না করেই গর্ভপাত করেছেন। আদালতে রিপোর্ট দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, গর্ভপাত করানো হয়ে গিয়েছে। তাতেই অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। চিকিৎসকদের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কেন তাঁরা এত তাড়াহুড়ো করলেন, মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ কেন মানা হল না, তরুণীর দ্রুত গর্ভপাত করানোর মতো শারীরিক কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কি না, জানতে চান বিচারপতি।
আদালত সূত্রে খবর, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই তরুণী। স্থানীয় থানায় তিনি অভিযোগও দায়ের করেছেন। তরুণীর অভিযোগ, ২০১৮ সালে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পর্যায়ক্রমে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। তার পর থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করেছেন ওই যুবক। তরুণীর অভিযোগ, এখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর ওই যুবক তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এই পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তরুণীর বক্তব্য, তিনি গর্ভপাত করাতে চান। তরুণী আদালতে আরও জানিয়েছেন, তাঁর আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। সংসার টানতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে সন্তানের জন্ম দিয়ে তাকে বড় করে তোলা সম্ভব নয়। তার পরেই গর্ভপাতের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।