ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার প্রশ্নে বিজেপির অন্দরের মতানৈক্য বারে বারেই প্রকাশ্যে আসছে। রাখিবন্ধন উৎসবের দিন ফের তা প্রকাশ্যে এল। হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় রবিবার চুঁচুড়ায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। বাংলার সংস্কৃতি, বাঙালির বিচার সম্পূর্ণ অন্য রকম। জন বার্লা বা দিলীপ ঘোষ কী বলেছেন, জানি না! তবে এই বাংলা কখনওই বিভক্ত হবে না।’’
কিছু দিন আগে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলে বিতর্ক তৈরি করেন বিজেপি সাংসদ এবং অধুনা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বার্লা। উত্তরবঙ্গের আরও কয়েক জন বিজেপি নেতা-নেত্রীর মুখেও সেই সুর শোনা যায়। তখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু স্পষ্ট ভাষায় তার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শনিবার জলপাইগুড়িতে বার্লার পাশে বসে দিলীপবাবু ওই দাবির সরাসরি বিরোধিতা করেননি। তিনি উল্টে বলেছিলেন, ‘‘আজ যদি জঙ্গলমহল বা উত্তরবঙ্গ আলাদা হতে চায়, তার সব দায়-দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে জিইয়ে রেখে মুখ্যমন্ত্রী চুক্তি সই করেছিলেনে, তখন কেন প্রশ্ন ওঠেনি? এখন আমরা আওয়াজ তুললেই বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে গেলাম?’’ যা শুনে অনেকেই মনে করছেন, প্রকারান্তরে রাজ্যভাগের আওয়াজকেই সমর্থন করেছেন দিলীপবাবু। যদিও ওই দিনই বার্লার সঙ্গ ছাড়ার পরে সন্ধ্যায় ফের পুরনো অবস্থানে ফিরে গিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। না গোর্খাল্যান্ড, না উত্তরবঙ্গ। কোনও রাজ্যের ব্যাপার নেই। শ্যামাপ্রসাদের বাংলাকেই আমরা সোনার বাংলা করব।’’
বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহও বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখিবন্ধনের প্রসঙ্গ টেনে এ দিন রাজ্যভাগের দাবির বিরোধিতা করেছেন।
রাজ্য ভাগ নিয়ে বিজেপির মতপার্থক্যকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি শব্দের মানে হয়ে গিয়েছে বিনোদন জনতা পার্টি। ওদের সব বিষয়েই মতান্তর। ওরা বুঝেছে, রাজ্যভাগ চাইলে জনতা বিরোধিতা করবে। কিন্তু অশান্তি পাকানোর চেষ্টা তো ওরা ছাড়তে পারবে না। তাই ওদেরই একাংশ রাজ্যভাগের দাবি তুলছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন কোচবিহারে বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা উত্তরবঙ্গে থাকলে এক রকম বলছেন, কলকাতায় বসে আবার অন্য রকম! ভোটের স্বার্থেই এই দ্বিচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। আগে তৃণমূলও ভোটের জন্য গ্রেটার কোচবিহার, কামতাপুরীর কথা বলে একই জিনিস করেছে। রাজ্যভাগের চক্রান্ত কোনও ভাবেই বাংলার মানুষ মানবেন না।’’