—প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েতের তিন স্তরে জয়ী ‘বিক্ষুব্ধ’দের নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। ফল ঘোষণার পরেই তাঁদের সম্পর্কে দলের ‘নরম’ মনোভাবের ইঙ্গিতে আপত্তি তুলছেন দলেরই একাংশ। শুধু তা-ই নয়, দলের ওই অংশেরই আশঙ্কা, নির্দলদের পাশাপাশি বোর্ড গঠনের সময় বিরোধী বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেসের সদস্যদেরও নেওয়া হলে তা নীচের তলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল তৃণমূল। সেই প্রেক্ষিতে অনেক দিন ধরে এবং ভোটের আগে তাঁর ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতেও বারবার বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই হুঁশিয়ারির পরেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকানো যায়নি। এই অবস্থায় ভোটের পরে সেই বিক্ষুব্ধদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের ভিতরেই। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার নির্বাচনের দায়িত্ব থাকা পদাধিকারী ও বিধায়কেরা মনে করছেন, বিক্ষুব্ধদের ফিরিয়ে নিলে দলের অন্দরে জটিলতা তৈরি হবে। রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘নির্দলদের বিষয়টি ‘কেস টু কেস’ দেখবেন দলীয় নেতৃত্ব।’’ সে ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘এঁরা তৃণমূলই। দলের পক্ষেই কাজ করেছেন। কিন্তু মনোনয়ন তুলে উঠতে পারেননি। জিতে গিয়েছেন। দল বিবেচনা করবে।’’ আগে থেকে হুঁশিয়ারি থাকলেও পুরভোটের পরেও নির্দল বিক্ষুব্ধদের অনেককেই দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে নির্দিষ্ট আসনের থেকে প্রায় ১২ হাজার অতিরিক্ত মনোনয়ন জমা পড়েছিল তৃণমূলেরই। সেখানেই বিক্ষুব্ধদের তৎপরতার আঁচ পেয়ে হুঁশিয়ারির পাশাপাশি অভিষেক জানিয়ে দেন, নির্দলেরা জিতলেও তৃণমূলে তাঁদের কোনও জায়গা হবে না। নির্বাচনের একেবারে মুখে এসে জেলায় জেলায় এই নির্দলদের বিরুদ্ধে শাস্তিও ঘোষণা করা হয়। প্রচারের শেষ দিনে তিনি নিজেই জানিয়ে দেন, কম-বেশি ২২০০ বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁদের মধ্যে বিজয়ীদের ফের দলে নেওয়া হলে নীচের তলার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে বলে মনে করছেন জেলা স্তরের নেতারা। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘এটা হলে খুব খারাপ হবে। দলের যে কর্মী-সমর্থকেরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছেন, জিতেছেন, তাঁদের কাছে এটা একটা বড় ধাক্কা হবে।’’
শুধু নির্দলই নয়। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস বহু আসনে জিতেছে। নির্বাচনের পরে ‘উন্নয়নে’র দোহাই দিয়ে নির্বাচিতদের দলে নিয়ে সেই সব বোর্ড হাতে নেওয়া হলে তা-ও জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলে মনে করছেন অনেকে। একই ভাবে বিরোধীরা বোর্ড গঠন করতে পারবে না, সেই রকম জায়গায় তাঁদের নির্বাচিতদের দলে নেওয়ার সম্ভাবনায় বিপদ দেখছেন তৃণমূল বিধায়কদের কেউ কেউ। মুর্শিদাবাদে বহু আসনে বিরোধীরা জিতেছে। জেলার শাসক দলের একাধিক বিধায়ক মনে করছেন, বিরোধী দলের সদস্যদের দলে নেওয়া হলে ক্ষতি হবে তৃণমূলের। যদিও এই জেলারই সাগরদিঘি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসকে দলে নেওয়ার পরে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ভাল ফলই করেছে। সাগরদিঘির গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি এ বার তৃণমূল পেয়েছে।