হুমায়ুন কবীর। —ফাইল ছবি।
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের শো কজ়ের উত্তরে সন্তুষ্ট নয় দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। মঙ্গলবার কমিটির তরফে হুমায়ুনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেখানেই তাঁকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হবে। তাঁর আচরণ সম্পর্কে দলের অভিমতও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের কিছু মতাদর্শ আছে। হুমায়ুন এমন কিছু বার বার বলছে, যা দলের আদর্শের পরিপন্থী। ও যা বলছে, বলেছে, তা ওর ব্যক্তিগত জায়গা থেকে। কিন্তু একজন বিধায়ক হয়ে এটা ও ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারে না।”
শোভনদেব জানান, শো কজ়ের জবাবে হুমায়ুন যা বলেছেন, তা সন্তোষজনক নয়। তার পরেই তিনি বলেন, “হুমায়ুনকে কাল ডেকে পাঠানো হয়েছে। ওকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে আসতে হবে। আমরা ওকে কিছু নির্দেশ দেব। সেগুলো মানতেই হবে।” তবে বার বার দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করার অভিযোগ ওঠায় ভরতপুরের বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হুমায়ুন কিছু কথা বলেছেন। তাঁর ওই মন্তব্যের জেরে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তৃণমূল সূত্রে খবর, হুমায়ুনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শো কজ়ের নির্দেশ দেন। তার পর গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিধায়ককে শো কজ়ের চিঠি পাঠিয়ে দেয় তাঁর দল।
শুক্রবার শোভনদেব জানান, হুমায়ুনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। বিধায়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ-ও বলা হয়, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি উত্তর না দেন, তা হলে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। শুক্রবার রাতে হুমায়ুনকে ফোনও করেন শোভনদেব। তখন সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন হুমায়ুন। তবে শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে তিনি শো কজ়ের জবাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
হুমায়ুন বলেছিলেন, ‘‘শুক্রবার রাত ৮টা ১২ মিনিট নাগাদ আমার সঙ্গে কথা হয় শোভনদেববাবুর। তার পর আমি শো কজ় চিঠি দেখি। এক পাতার চিঠি দিয়েছিল। আমি দু’পাতার জবাব দিয়েছি। শোভনদেব যে হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর থেকে শো কজ় চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সেই নম্বরে আমি ৯টা ৩৫ মিনিটে আমার জবাব পাঠিয়ে দিয়েছি পিডিএফ করে।’’ হুমায়ুন আরও বলেন, ‘‘এর আগে এক পাতার শো কজ়ের চিঠি দিয়েছিল। তার তিন পাতার জবাব দিয়েছিলাম। আমি বলেছি, আমার কাছে দল আগে নয়। আমি হুমায়ুন কবীর।’’ হুমায়ুন এ-ও জানান যে, তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙেছেন, এমনটা মনে করেন না।
এর আগেও দু’বার শো কজ় করা হয়েছে হুমায়ুনকে। ২০১৫ সালে তৃণমূল থেকেই সাসপেন্ডও হন তিনি। রয়েছে দলবদলের ইতিহাসও। অথচ গত বছর নভেম্বর মাসে কালীঘাটে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, পর পর তিন বার শো কজ় হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে সংশ্লিষ্ট নেতাকে। মমতার সেই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত দু’বার শো কজ় করা হয়েছে হুমায়ুনকে।