হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর শ্মশান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
একটি শ্মশানের খারাপ চুল্লির জন্য শবদাহের সময়ে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। অন্য দিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার আরও একটি শ্মশানে চলছে প্রকাশ্যে কাঠের চুল্লিতে শবদাহ। দূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট সরকারি পরিকল্পনা সত্ত্বেও এই ভয়াবহ দূষণ ঘটে চলেছে খোদ হাওড়া শহরে।
অথচ দূষণ রুখতে ওই শ্মশানগুলিতে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর জন্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রের ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশও দেয়। কিন্তু অভিযোগ, সময় মতো কাজ শুরু হলেও প্রশাসনিক গাফিলতিতে আজ পর্যন্ত চুল্লি তৈরি শেষ হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত দূষণে ভারাক্রান্ত হচ্ছে গোটা শহর।
হাওড়া পুরসভা এলাকায় রয়েছে তিনটি শ্মশান। তার মধ্যে একটি উত্তর হাওড়ায়। অন্য দু’টি মধ্য হাওড়ায়। উত্তর হাওড়ার বাঁধাঘাট শ্মশান ও মধ্য হাওড়ার শিবপুর শ্মশান রয়েছে গঙ্গার ধারে। মধ্য হাওড়ার বাঁশতলা শ্মশানটির অবস্থান ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে। পুরসভা সূত্রে খবর, ২৪ বছর আগে শিবপুর শ্মশানে একটি মাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হয়। ২০০৯-এর শেষ দিক থেকে অথরিটির টাকায় শুরু হয় শিবপুরে আরও একটি ও বাঁধাঘাট ও বাঁশতলা শ্মশানে একটি করে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজ। কাজের বরাত দেওয়া হয় কেএমডিএ-কে।
অভিযোগ, বাঁধাঘাটে সেই কাজ বছর খানেক আগে শেষ হলেও বাড়তি আরও তিন বছরেও শেষ হয়নি শিবপুর ও বাঁশতলা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ। অভিযোগ উঠেছে, ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ও বহু ব্যবহারে শিবপুর ঘাটের পুরনো চুল্লিটির ফার্নেসে গর্ত হয়েছে। ফলে মৃতদেহ ঢোকানোর পরেই কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চুল্লির বন্ধ দরজা ও বায়ু নিষ্কাশনের পাইপ দিয়ে। তা ছড়িয়ে পড়ছে এলাকা জুড়ে। ধোঁয়া আর বীভৎস দুর্গন্ধে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে শবযাত্রী-সহ এলাকাবাসীর।
যদিও ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে চুল্লিটি সারাইয়ের জন্য হাওড়া পুরসভার তৃণমূল শাসিত নতুন বোর্ড উদ্যোগী হয়েছে বলে দাবি করেন শ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। তিনি জানান, ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ফার্নেস সারানো হবে। কিন্তু ঠিক কবে কাজ শেষ হবে তা তিনি পরিষ্কার জানাতে পারেননি। একই ভাবে তিনি জানাতে পারেননি বাঁশতলা শ্মশানঘাটের চুল্লি কবে চালু হবে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বছরখানেক আগে বাঁশতলা বৈদ্যুতিক চুল্লিটির কাজ শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়ায় চালু করা যায়নি। সিইএসসির ডেপুটি ম্যানেজার (হাইটেনশন) দিলীপ সেনগুপ্ত বলেন, “আগের বাম বোর্ড বাঁশতলায় সুইচ গিয়ার বসানোর অনুমতি না দেওয়ায় ও কেব্ল পাতা নিয়ে জটিলতা হওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমান বোর্ড সুইচ গিয়ার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। তা বসানোর পরে কেব্ল পাতা শুরু হবে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।”
শ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আগের বোর্ডের জন্যই এত দেরি। আমরা সব দিক থেকেই সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছি। আশা করছি ওই শ্মশানে দ্রুত কাজ শেষ হবে।”