ভোট আসে, ভোট যায় রাস্তা হয় না মহিষগোটে

পাকা রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার সব ইট তুলে দিয়ে ফেলা হয়েছিল স্টোন চিপস। কিন্তু ২০১৪ সালেও তৈরি হয়নি ডোমজুড়ের সেই রাস্তা। নানা সময়ে গ্রামে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা এলেও সুরাহা হয়নি। রাস্তা তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৩
Share:

পাঁজর বের করা সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

পাকা রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার সব ইট তুলে দিয়ে ফেলা হয়েছিল স্টোন চিপস। কিন্তু ২০১৪ সালেও তৈরি হয়নি ডোমজুড়ের সেই রাস্তা। নানা সময়ে গ্রামে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা এলেও সুরাহা হয়নি।

Advertisement

রাস্তা তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। দিন কয়েক আগে বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ডোমজুড় এলাকায় প্রচারে গেলেও ওই রাস্তার পাশের গ্রামগুলিতে প্রচারে যাননি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ওই রাস্তা তৈরির জন্য সাংসদ চেষ্টা করেও এখনও সফল হননি। এই কারণে অঞ্চল তৃণমূলের কয়েক জন নেতার উপরে তিনি ক্ষুব্ধ। যদিও কল্যাণবাবুর দাবি, “অন্য কর্মসূচি থাকায় আমি ওই গ্রামগুলিতে প্রচারে যেতে পারিনি। ওই রাস্তার সমস্যার কথা জানি। ঠিকাদার সমস্যা তৈরি করায় কাজ আটকে গিয়েছিল। বর্তমানে সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে।”

ডোমজুড়ের বাঁধের বাজার থেকে ভাদুয়া পর্যন্ত ওই রাস্তা এলাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাটি পাকা করার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তাটির পাশে রয়েছে উত্তর ঝাঁপড়দহ ও রুদ্রপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মহিষগোট, দক্ষিণবাড়ি, জাবতাপোতা, রাজাপুরের মতো কয়েকটি গ্রাম। ২০০৭ সালে টেন্ডার হওয়ার পরে ২০১০ সালের অগস্ট মাসে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ওই রাস্তা পিচ ঢেলে পাকা করার কাজ শুরু হয়। বরাদ্দ হয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। আশায় বুক বাঁধেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু কয়েক মাস কাজ হওয়ার পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাস্তা তৈরির কাজ। যা আজও শুরু হয়নি।

Advertisement

কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাস্তার কাজ?

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, রাজাপুর গ্রামে একটি খালের উপরে সেতু তৈরি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। রাস্তা তৈরিতে নিযুক্ত বাস্তুকার ঠিকাদারকে ওই সেতুটি তৈরি করতে বলেন। সেটি তৈরি হয়। কিন্তু পরে বাস্তুকার বদলে যান। সেতু তৈরির জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দও হয়নি। পরে যিনি ঠিকাদারির দায়িত্ব পেলেন, তিনি সেতু তৈরির জন্য বাড়তি টাকা দাবি করে মামলা করেন। আইনি জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা তৈরির কাজ।

উত্তর ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েতের প্রধান সজল দাসের দাবি, “ওই রাস্তা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কয়েক বার আলোচনা করা হয়েছে। বিদায়ী সাংসদ তথা লোকসভায় ওই এলাকায় দলের প্রার্থী কল্যাণবাবু অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে রাস্তার কাজ শুরু হচ্ছে না।” ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের (টিঙ্কাই) অভিযোগ, “সিপিএম পরিচালিত আগের জেলা পরিষদের দোষেই আটকে গিয়েছে ওই রাস্তা তৈরির কাজ।”

বাম পরিচালিত পূর্বতন হাওড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “অনেক দিন ধরে চেষ্টার পরে আমরাই ওই প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিলাম। কিন্তু মাঝে আইনি জটিলতা তৈরি হয়। সেই সমস্যার কারণেই কাজ আটকে গিয়েছে।” ওই রাস্তা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সুফল সরকার বলেন, “আমি চাই ওই রাস্তা হোক। কিন্তু প্রশাসনের কর্তারা পুরো সহযোগিতা করছেন না।”

২০০৯ সালে লোকসভা, ২০১১ সালে বিধানসভা ও ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোট হয়ে গিয়েছে। রাস্তা হয়নি। সামনে লোকসভা ভোট। স্থানীয় বাসিন্দা সদানন্দ পণ্ডিত, দিলীপ পাকড়েদের ক্ষোভ, “অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না, কাজ চাই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement