মায়ের যত্ন।—নিজস্ব চিত্র।
বাবা সারাদিন স্কুলের সামনে, হাটে-বাজারে ঘুরে ছোলা-মটর বিক্রি করে সংসার চালান। রাতে বাবার জন্য ছোলা-মটর মাখার মশলা তৈরি করার জন্য হাত লাগাতে হত তাকে। তবু পড়াশোনার ছেদ পড়েনি। আর্থিক অনটন হার মানাতে পারেনি শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র দেবাশিস পালকে। মাধ্যমিকে ৬৩৬ নম্বর পেয়ে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পাড়া-পড়শিদের। কিন্তু এ বার ছেলের পড়ার খরচ কী ভাবে উঠবে, তা ভেবে রাতের ঘুম উবেছে দেবাশিসের বাবা রমেশবাবুর।
শ্যামপুরের কাঁঠালিবার পূর্বপাড়ায় দেবাশিসদের বাড়ি। তা-ও সরকারি প্রকল্পে পঞ্চায়েতের করে দেওয়া। দেবাশিস বরাবরই স্কুলে ভাল ফল করেছে। কিন্তু অভাব সব সময়েই পিছু টেনেছে তাকে। স্রেফ অর্থাভাবের জন্যই অষ্টম শ্রেণির বেশি এগোনো হয়নি দিদি লুসির। সীমাহীন অভাবকে হার মানিয়ে দেবাশিসও কতটা এগিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না পরিবারের। কিন্তু তার এই মরিয়া লড়াই-ই শেষ পর্যন্ত জিতে গিয়েছে। প্রায় ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে মাধ্যমিক পাশ করেছে। পদার্থবিদ্যায় তার নম্বর ৯৫। অঙ্ক আর জীবন বিজ্ঞান দু’টি বিষয়েই সে পেয়েছে ৯৮। দেবাশিসের কথায়, “বাবা কত কষ্ট করে আমার পড়ার খরচ জোগাড় করেন, জানি। তা সত্ত্বেও বাবা বলেছিলেন, আমি যেন হাল না ছাড়ি। ভবিষ্যতেও সেই চেষ্টাই করব।”
দেবাশিস পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায়। ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণির পড়া শুরুও করেছে সে। কিন্তু লক্ষ্যপূরণে বড় অর্থাভাব। রমেশবাবু বলেন, “যত কষ্টই হোক, ছেলের স্বপ্নপূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।” বাবা, দিদি ছাড়াও মা আদুনাদেবীও দেবাশিসকে যথাসম্ভব অনুপ্রেরণা দেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস বলেন, “ছেলেটি দারিদ্রকে হারিয়ে দিয়েছে। আমরাও সাধ্যমতো ওকে সাহায্য করেছি। প্রয়োজনে আবারও ওর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।”