প্রতারণা, বিমা সংস্থাকে জরিমানার নির্দেশ

৭৩ বছরের মেয়াদি বিমা! তার জন্য বাৎসরিক ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে প্রিমিয়াম! জমা পড়া টাকা-সহ লভ্যাংশ মিলবে মেয়াদ শেষে! ভুল বুঝিয়ে বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একটি বেসরকারি বিমা সংস্থা তাঁর মেয়ের নামে এমন একটি অদ্ভূত পলিসি করিয়ে নেয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৭:০৮
Share:

৭৩ বছরের মেয়াদি বিমা! তার জন্য বাৎসরিক ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে প্রিমিয়াম! জমা পড়া টাকা-সহ লভ্যাংশ মিলবে মেয়াদ শেষে!

Advertisement

ভুল বুঝিয়ে বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একটি বেসরকারি বিমা সংস্থা তাঁর মেয়ের নামে এমন একটি অদ্ভূত পলিসি করিয়ে নেয় এবং তিনি প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার পরে নথি দেখে প্রতারণার কথা জানতে পারেন এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি হাওড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিবপুরের বাসিন্দা, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-র প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান নারায়ণ মাইতি। আদালত সম্প্রতি ‘মেটলাইফ ইন্ডিয়া ইন্সিওরেন্স লিমিটেড’ নামে ওই বিমা সংস্থাকে এক লক্ষ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ওই পলিসির জন্য দেওয়া প্রথম কিস্তির টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে ওই সংস্থা নারায়ণবাবুর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ যে টাকা কেটেছিল, তা-ও ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন হাওড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিন বিচারক ওই নির্দেশ দিয়ে মন্তব্য করেন, বিমা সংস্থাগুলি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের কষ্টের টাকা কী ভাবে আত্মসাৎ করে এই ঘটনা তারই প্রমাণ।

ওই বিমা সংস্থার হাওড়া কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে চাননি। তবে, আদালতে সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছিল নারায়ণবাবু এবং তাঁর মেয়ে সব জেনেশুনে প্রস্তাবে সই করেছিলেন। আদালত সে কথা মানেনি। বিচারকেরা জানিয়েছেন, নারায়ণবাবু ও তাঁর মেয়ের সই জাল করা হয়েছিল।

Advertisement

বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ এনেছেন নারায়ণবাবু?

আদালতকে নারায়ণবাবু জানান, ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই তিনি ওই বিমা সংস্থার হাওড়া কার্যালয় থেকে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে একটি পলিসি কেনেন। পলিসির শর্ত ছিল, প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা করে পাঁচ বছর ধরে প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। পাঁচ বছর পরে তিনি লভ্যাংশ-সহ টাকা ফেরত পাবেন। ইসিএস পরিষেবার মাধ্যমে নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বিমা সংস্থা প্রিমিয়ামের টাকা কাটত। কিন্তু ওই সংস্থা নিয়মের বাইরে গিয়ে ওই পলিসি ছ’বছরের করে বাড়তি ৫০ হাজার টাকা কেটে নেয়। ফলে, নারায়ণবাবু জমা দেন তিন লক্ষ টাকা। তাঁর দাবি, মেয়াদ শেষে তিনি যখন টাকা ফেরত চান, তখন বিমা সংস্থা তাঁকে জানায়, পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নামে আরও পাঁচ বছর মেয়াদি বিমা করাতে হবে। পলিসির প্রথম প্রিমিয়ামের টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা তিনি ফেরত পাবেন। নিরুপায় হয়ে নারায়ণবাবু সেই প্রস্তাবে রাজি হন।

নারায়ণবাবুর অভিযোগ, তিনি যে টাকা জমা দিয়েছিলেন সুদ-সহ তার পাওনা হয় ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে তাঁকে নগদে ফেরত দেওয়া হয় এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর তাঁর মেয়ের নামে যে পলিসি করাতে হয়, তার বাৎসরিক প্রিমিয়াম ছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। ওই পলিসি করানোর কয়েক মাস পরেই বিমা সংস্থা তাঁকে যে নথিপত্র পাঠায় তাতে দেখা যায়, নারায়ণবাবুর মেয়েকে ৭৩ বছর ধরে বাৎসরিক ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে প্রিমিয়াম দিতে হবে। জমা দেওয়া টাকা লভ্যাংশ-সহ নারায়ণবাবুর মেয়ে ফেরত পাবেন ৭৩ বছর পরে। তখন তাঁর মেয়ের বয়স হবে ১০১ বছর। নারায়ণবাবু এই ‘অবাস্তব’ পলিসি-র বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র আপত্তির কথা জানিয়ে ওই বিমা সংস্থার কাছে তা বাতিলের আবেদন জানান। কিন্তু বিমা সংস্থা না মানায় ২০১৩ সালের ১০ জুন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন নারায়ণবাবু।

আদালত প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই করে ও শুনানির মাধ্যমে নারায়ণবাবুর অভিযোগটি মেনে নেয়। মামলার রায়ে আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, বিমা সংস্থা নারায়ণবাবুর মেয়ের নামে করা পলিসির প্রিমিয়াম বাবদ জমা নেওয়া ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেবে এবং নারায়ণবাবুকে ফিরিয়ে দেবে তাঁর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ কেটে নেওয়া ৩১ হাজার টাকা। প্রতারণার জন্য ওই সংস্থা নারায়ণবাবুকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে।

আদালতের ওই নির্দেশ জানার পরে খুশি নারায়ণবাবু। তিনি বলেন, “আমাকে ভুল বুঝিয়ে বিমা করানো হয়েছিল। একদিকে আমার নিজের পলিসিতে তিন লক্ষ টাকা জমা করলাম। তার লাভ একটি পয়সাও পেলাম না। উল্টে আমার ৩১ হাজার টাকা জরিমানাও করা হল। আবার মেয়ের নামে এমন একটি বিমা করানো হল যাতে সেই খাতে বিনিয়োগ করা টাকাটাও জলে গেল। মূল কথা তিন লক্ষ টাকা জমা দিয়ে পাঁচ বছর পরে আমি হাতে পেলাম সাকুল্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement