গৃহশিক্ষক নেই, বইও না, শুধু চেষ্টাই অবলম্বন

কারও বাবা রেলের হকার, কারওর বা রাজমিস্ত্রি। কেউ আবার ভ্যানরিকশা চালকের মেয়ে। টাকা দিয়ে গৃহশিক্ষক রাখা তো দূর, অনেকের পাঠ্যবইও নেই সব ক’টা। তবু ইচ্ছাশক্তি, আর ভাল রেজাল্ট করার অদম্য জেদই মাধ্যমিকে সাফল্য এনে দিয়েছে ওদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০২:০১
Share:

দেবদত্ত, দেবযানী ও পূরবী। ছবি: সামসুল হুদা।

কারও বাবা রেলের হকার, কারওর বা রাজমিস্ত্রি। কেউ আবার ভ্যানরিকশা চালকের মেয়ে। টাকা দিয়ে গৃহশিক্ষক রাখা তো দূর, অনেকের পাঠ্যবইও নেই সব ক’টা। তবু ইচ্ছাশক্তি, আর ভাল রেজাল্ট করার অদম্য জেদই মাধ্যমিকে সাফল্য এনে দিয়েছে ওদের।

Advertisement

ক্যানিং ডেভিড সেশুন হাইস্কুলের ছাত্র দেবদত্ত রায় মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬২৪ নম্বর। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু ছেলেকে ডাক্তার বানানোর মতো আর্থিক জোর নেই বাবা রঞ্জিতবাবু। ট্রেনে হকারি করে যে সামান্য টাকা উপার্জন করেন তিনি, তাতে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চার জনের সংসার চালানো দায়। খোলার চালের ইটের দেওয়াল দেওয়া এক কামরা ঘর। দেবদত্ত জানায়, পরীক্ষার আগে সারা দিনে ১০-১১ ঘণ্টা পড়াশোনা করত সে। এমনিতে কোনও প্রাইভেট টিউশন নেয়নি। তবে পরীক্ষার আগে দুই শিক্ষকের কাছে তিন কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটে পড়তে যেত সে। দেবদত্ত বলে, “ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করতে চাই। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব, বুঝতে পারছি না।” সে জানায়, স্কুলের শিক্ষকেরা সাহায্য করেছেন। বন্ধুরাও বইপত্র দিয়েছে। মা সীমাদেবী বলেন, “কখনও কোনও আবদার করেনি ও। একবার শুধু সাইকেল চেয়েছিল। সেটাও দিতে পারিনি।”

গোসাবার রাঙাবেলিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৫২৭ নম্বর পেয়েছে দেবযানী মণ্ডল। বাবা রঞ্জিতবাবু ভ্যান চালান। মা মাধবী ঘর কাজ সামলান। বাড়িতে আরও তিন ভাইবোন রয়েছে। তাদের এক চিলতে মাটির বাড়িতে কিছু দিন আগেও বিদ্যুৎ ছিল না। হ্যারিকেনের আলোতেই পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের লেখার ভক্ত দেবযানী দিনে রাতে আট-ন’ঘণ্টা পড়াশোনা করত। কোনও গৃহশিক্ষকও ছিল না তার। ছ’বছর আগে আয়লায় ভেসে গিয়েছিল পরিবার। সেখান থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। আপাতত নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় দেবযানী। তারও ইচ্ছা ডাক্তারি পড়ার।

Advertisement

ক্যানিংয়ের রায়বাঘিনি হাইস্কুলের ছাত্রী পূরবী নস্কর এ বার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪২৪ নম্বর। বাবা সুজনবাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি। দিদির শরীরে বাসা বেঁধেছে টিউমার, ভাই মৃগীর রোগী। পূরবী জানায়, সংসারে মায়ের সব কাজে সাহায্য করে দিনে সাত-আট ঘণ্টা পড়ত সে। গৃহশিক্ষক তো দূর, অর্ধেক পাঠ্যবই ছিল না। বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় মেয়েটি। পূরবী বলে, “সংসারের যা অবস্থা, শেষ পর্যন্ত কত দূর পড়াশোনা চালাতে পারব জানি না।” মা লতিকাদেবী বলেন, “খুব লাজুক মেয়ে আমার। পরিবারের কথা ভেবে কখনও কিছু মুখ ফুটে বলে না। চেষ্টা করব, যাতে ওকে পড়াতে পারি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement