গোঘাটে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে খুন

পুকুর থেকে মাছ চুরিকে কেন্দ্র করে দিন কয়েক ধরে গোঘাটের মামুদপুর গ্রামে অশান্তি চলছিল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। বুধবার রাতে সেই ঘটনার জেরে ফের উত্তেজনা ছড়াল। গোষ্ঠী-সংঘর্ষের সময়ে টাঙ্গির কোপে মারা গেলেন নরেশ রায় (৫৪) নামে এক তৃণমূল কর্মী। আহত হন দুই গোষ্ঠীর মোট পাঁচ জন। দলের একটি কার্যালয়ে ভাঙচুরও চালানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোঘাট শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

আহত তৃণমূল কর্মীদের আরামবাগ স্টেশনে দেখতে এলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। ছবি: মোহন দাস।

পুকুর থেকে মাছ চুরিকে কেন্দ্র করে দিন কয়েক ধরে গোঘাটের মামুদপুর গ্রামে অশান্তি চলছিল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। বুধবার রাতে সেই ঘটনার জেরে ফের উত্তেজনা ছড়াল। গোষ্ঠী-সংঘর্ষের সময়ে টাঙ্গির কোপে মারা গেলেন নরেশ রায় (৫৪) নামে এক তৃণমূল কর্মী। আহত হন দুই গোষ্ঠীর মোট পাঁচ জন। দলের একটি কার্যালয়ে ভাঙচুরও চালানো হয়। খুনের অভিযোগে কাদের খান নামে এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

হতাহতেরা দলীয় কর্মী বলে মেনে নিয়েও তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের অভিযোগ, “ঘটনার পিছনে বিজেপি ও সিপিএমের ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্ব। নিহতের স্ত্রী শিবানীদেবী অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল নেতা সাহাবুদ্দিন খান ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় উত্তেজনা থাকায় টহলদারি চলছে। বাকি অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা হচ্ছে।


নিহত তৃণমূল কর্মী নরেশ রায়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার রাত দেড়টা গ্রামের একটি পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেতা সাহাবুদ্দিন খানের ঘনিষ্ঠ ওই দলের দুই কর্মী সত্য দলুই এবং সুভাষ আড়িকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন পুকুরটি ‘লিজ’ নেওয়া সঞ্জয় কোলে-সহ চার মাছ চাষি। তাঁরাও তৃণমূল সমর্থক। তাঁরা বিষয়টি ওই এলাকার আর এক তৃণমূল নেতা নিতাই নন্দীর ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষকে জানান। শ্যামলবাবুর পরামর্শ মতো পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করা হয়।

সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে শ্যামলবাবুর বিরোধ দীর্ঘদিনের বলে তৃণমূলেরই একটি অংশ মেনে নিয়েছেন। পুলিশ সত্য এবং সুভাষকে গ্রেফতার করলেও মঙ্গলবার দু’জনেই জামিন পান। সত্য এবং সুভাষকে কেন পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছিল, এই প্রশ্ন তুলে সাহাবুদ্দিনের লোকজন দিন কয়েক ধরে গ্রামে হুমকি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ তোলেন শ্যামলবাবুরা। কিন্তু শুধু হুমকিতেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। বুধবার রাতে সাহাবুদ্দিন দলবল নিয়ে গ্রামের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে শ্যামলবাবু এবং সেখানে উপস্থিত কয়েক জন দলীয় কর্মীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। কার্যালয়টিতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ এসে যাওয়ায় তখনকার মতো গোলমাল মিটে গেলেও রাতে ফের শুরু হয়। টাঙ্গি, রড এবং লাঠি নিয়ে সাহাবুদ্দিনের লোকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই দু’পক্ষের হাতাহাতি বাধে। নরেশ রায়কে কয়েক জন দলীয় কার্যালয় থেকে টেনে বের করে নিয়ে গিয়ে টাঙ্গির কোপ মারে। ঘটনাস্থলে ফের পুলিশ আসে। রাতেই নরেশবাবুকে আরামবাগ হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। আহতদের আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল নেতা শ্যামল ঘোষ। তাঁর ডান হাত-পা ভেঙেছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে তিনি বলেন, “এলাকায় অশান্তি যাতে না হয়, সে জন্যই মাছ চুরিতে যুক্তদের পুলিশে দিই। সেই রাগেই সাহাবুদ্দিন দলবল নিয়ে হামলা চালাল। তার আগে গ্রামে ফিরেই ধৃতেরা সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে জামিনের খরচ আদায় করে মাছ চাষিদের কাছ থেকে।” পক্ষান্তরে, সাহাবুদ্দিনে দাবি গোলমালের ঘটনায় তিনি জড়িত নন। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি সিপিএমের লোক। মাছ চুরি নিয়ে একটি বিবাদ পুলিশ-আদালত অব্দি কেন গড়াল সেই কৈফিয়ত চাইতে গিয়েছিল আমাদের কয়েক জন। আমাদের দলেরই একটা অংশ সিপিএমের লোকদের নিয়ে প্রথম হামলা করে। আমাদের ছেলেরা শুধু প্রতিবাদ করেছে।” তৃণমূল নেতা নিতাই নন্দী দাবি করেছেন, “সাহাবুদ্দিনরা এলাকায় ক্ষমতা কায়েম করতেই সন্ত্রাস করে চলেছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement