আর্থিক অনটনের মধ্যেও ওদের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার

মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করে, সেলাইয়ের নকশা তুলে দেওয়ার পর দিনের সামান্য সময়ে পড়াশোনা করে এ বার মাধ্যমিকে ৫৮০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তালদি সুরবালা গালর্স হাইস্কুলের ছাত্রী নীলিমা সুঁই। আবার একজন ভ্যানচালকের ছেলে গোসাবার রাঙাবেড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্র মহারাজ মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০১:১১
Share:

নীলিমা সুঁই ও মহারাজ মণ্ডল।

মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করে, সেলাইয়ের নকশা তুলে দেওয়ার পর দিনের সামান্য সময়ে পড়াশোনা করে এ বার মাধ্যমিকে ৫৮০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তালদি সুরবালা গালর্স হাইস্কুলের ছাত্রী নীলিমা সুঁই। আবার একজন ভ্যানচালকের ছেলে গোসাবার রাঙাবেড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্র মহারাজ মণ্ডল। ৫৯২ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। এরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হতে চায়। মানুষের সেবা করতে চায়। কিন্তু নীলিমা এবং মহারাজের চোখে একরাশ স্বপ্ন থাকলেও অনিশ্চয়তাও রয়েছে প্রচুর।

Advertisement

নীলিমার বাবা পবিত্র সুঁই পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানোই দায়। নীলিমার মা ভগবতী বাড়িতে বসেই সেলাইয়ের কাজ করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চাঁদের পাহাড়ের ভক্ত নীলিমা জানায়, “শঙ্কর যেমন সমস্ত ভয়-বিপদ-বাধাকে উপেক্ষা করে চাঁদের পাহাড়ে পাড়ি দিয়েছিল, আমিও তেমনি সমস্ত বাধা কাটিয়ে জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।” চিকিৎসক হতে চায় সে। কিন্তু পরিবারের যা অবস্থা, তাতে কত দূর এগোতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছে মেধাবী ছাত্রীটি। মাধ্যমিকের পড়াশোনার জন্য স্কুলের শিক্ষিকারাও তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানায় নীলিমা। তার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কিন্তু এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় অন্য স্কুলে ভর্তি হতে হবে নীলিমাকে। তার স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা লিপি ভট্টাচার্য বলেন, “নীলিমার দৃঢ় মানসিকতা আজ ওর সাফল্য এনে দিয়েছে। আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু না হওয়ার ফলে ওকে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে নীলিমার কোন সমস্যা হলে অবশ্যই পাশে দাঁড়াব।”

আয়লা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মহারাজদের বাড়ি। এমনকী, তাঁর বাবা লক্ষ্মণ মণ্ডলের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল মাছ ধরতে যাওয়ার একটি নৌকা। সেটিও ঝড়ে ডুবে গিয়েছিল এক সময়ে। এখন তাঁদের সংসার চলে লক্ষ্মণবাবুর ভ্যান চালানোর সামান্য ক’টা টাকায়। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম দশা তাঁর।

Advertisement

কিন্তু মহারাজ চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। বই কেনার সামর্থ্য না থাকায় একটি সংস্থা তাকে বই কিনতে সাহায্য করেছিল বলে জানায় মহারাজ। এক চিলতে মাটির বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। লন্ঠনের আলোয় পড়তে হত ছেলেটিকে। মহারাজের কথায়, “আমার ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে এটা কতখানি সম্ভব হবে, তা জানি না।” লক্ষ্মণবাবুর কথায়, “আয়লা আমার সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে কোনও রকমে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। এখন ছেলে চাইছে কলকাতার স্কুলে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞান পড়তে। কিন্তু আমাদের মতো গরিব মানুষের এ ধরনের স্বপ্নপূরণ কী ভাবে সম্ভব জানি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement