মার্কশিট নিতে মেদিনীপুরে শিক্ষা সংসদের কার্যালয়ে লাইন শিক্ষকদের। ছবি: কিংশুক আইচ।
পাশের হারে এগোচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর। উচ্চ মাধ্যমিকে এ জেলায় পাশের হার ৮৮.৮৯ শতাংশ। যা রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে পাশের হার ৯১.৬৫ শতাংশ।
পাশের হারে জেলা এতটা এগোনোয় খুশি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। তিনি বলেন, “পাশের হারে এ বার জেলা রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। আগে কখনও চতুর্থ, কখনও পঞ্চম হত। জেলার ফলাফলে সত্যিই আমরা খুব খুশি।” তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের যেমন চেষ্টা ছিল, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও তেমন উদ্যোগ ছিল। সকলের চেষ্টাতেই জেলা এগোচ্ছে। জেলার সর্বত্র বিশেষ করে জঙ্গলমহল এলাকায় শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না। গত চার বছরে পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।” এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয়েছে। ফলে, অনেকে গ্রামের কাছাকাছি স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন শ্যামপদবাবু। তাঁর কথায়, “এর সুফল আগামী দিনেও মিলবে।”
গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পশ্চিমে পাশের হার ছিল ৮২ শতাংশ। পূর্ব মেদিনীপুরের ছিল ৮৮ শতাংশ। এ বার পশ্চিম অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, এত দিন পশ্চিমের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ছিল জঙ্গলমহলের অনুন্নয়ন। বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড়ের মতো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে। সর্বত্র শিক্ষার আলো সে ভাবে পৌঁছয়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও তৈরি হয়েছে কলেজ। জঙ্গলমহলের প্রায় সব স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তর চালু হয়েছে। পরিকাঠানো উন্নয়ন, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগারের উন্নয়নে কয়েক লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। কয়েক বছর আগেও জঙ্গলমহলে মাধ্যমিকের পরে স্কুলছুটের গড় সংখ্যাটা ছিল যেখানে ৩০ শতাংশ। সংখ্যাটা গত দু’বছরে নেমে এসেছে ১২ শতাংশে। উচ্চ মাধ্যমিকের জেলার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মধুসূদন গাঁতাইত বলেন, “জেলার কিছু এলাকা পড়াশোনার দিক থেকে একটু পিছিয়ে ছিল। তবে গত চার বছরে পরিস্থিতি অনেকখানি বদলেছে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। ফলে, আগামী দিনে পাশের হার আরও বাড়তে পারে।”
পরিস্থিতি যে পাল্টেছে মানছেন শিক্ষকরাও। মেদিনীপুর টাউন স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ চক্রবর্তী বলেন, “এখন পশ্চিম মেদিনীপুরেও পঠনপাঠনের মান বাড়ছে।” ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “পরিবারে সচেতনতা বাড়ছে। ফলে ফল আগের থেকে ভাল হচ্ছে।”
জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতেও গড় পাশের হার এ বার ৯০ শতাংশের বেশি। কয়েকটি স্কুলে তো পাশের হার একশো শতাংশ। নয়াগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিকাশকুমার মণ্ডল জানালেন, “এলাকায় অশান্তির পরিবেশ এখন অতীত। তা ছাড়া, হাতের নাগালে বালিগেড়িয়ায় সরকারি কলেজ হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পেরও ভূমিকা রয়েছে।” বিনপুরের দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার এ বার ৯০ শতাংশ। প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় হোতার কথায়, “অশান্তি পর্বে পাশের হার ৬০ শতাংশের আশেপাশে থাকত। শান্তি ফিরতেই পড়ুয়াদের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’’
ইন্টারনেটের দুনিয়াও জেলার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শঙ্করপ্রসাদ লাহা বলেন, “গৃহশিক্ষকের অভাব হলে নেট সার্চ করে প্রয়োজনীয় পাঠ্য সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। এখন তো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের সুযোগ মিলছে।” ঝাড়গ্রাম ব্লকের গজাশিমুল উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনু বেরা বলেন, “সোস্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নানা প্রান্তের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে। শিক্ষা সংক্রান্ত আলাপ আলোচনায় সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়ারা।”
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেল, এ বারই প্রথম নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় প্রাপ্ত নম্বর বেড়েছে। নতুন এই সিলেবাসে ছোট প্রশ্নের সংখ্যা বেশি। তার উপর প্রোজেক্টেও নম্বর ছিল। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের ভাল ফল করা সহজ হয়েছে। পাশের হার বাড়ার এটাও একটা কারণ।