এসটিএফের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য পুলিশের এসটিএফের দাবি, তাদের হাতে ধরা পড়ার আগে, নিজেদের মোবাইলের সমস্ত তথ্য মুছে ফেলেছিল আব্দুর রকিব সরকার ওরফে হাবিবুল্লা এবং কাজী আহসানউল্লাহ ওরফে হাসান। গোয়েন্দাদের দাবি, ‘আল কায়দা’র ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা ‘আকিস’-এর সদস্য ওই দুই যুবক প্রায় পনেরো জনকে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে আশ্রয় নিতে সাহায্য করেছিল। সে জন্য ‘ভুয়ো’ ভারতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে দিয়েছিল। তবে জেরার মুখে এ রাজ্যে ওই সংগঠনের ‘মাথা’ হাবিবুল্লা এবং হাসান সহযোগিতা করছে না। তাই তাদের মোবাইল ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। ‘মুছে ফেলা’ তথ্য উদ্ধার করা গেলে, ওই দু’জন এ রাজ্যে কতটা জাল ছড়িয়েছিল, জানা যাবে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মার্চ মাসে অসমের বরপেটা-সহ একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে প্রায় কুড়ি জন জঙ্গিকে ধরা হয়। যাদের কয়েক জনকে এ রাজ্যে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল হাবিবুল্লা। এসটিএফ সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের একটি জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য মুফাক্কির হাবিবুল্লার গ্রাম দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের আউশায় সামিদ আলি মিয়া ছদ্মনামে প্রায় এক বছর লুকিয়ে ছিল।
আউশায় ওই ‘সেফ হাউজ়’ গড়ার কারণ কী? গোয়েন্দারা মনে করছেন, প্রাথমিক ভাবে ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বাছা হয়েছে গ্রামটিকে। আউশা থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছতে বড় জোর আধ ঘণ্টা লাগে। সেখান কয়েকটি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়ার ‘ফাঁক’ জঙ্গিরা ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকতে পারে। আউশা থেকে বুনিয়াদপুর, কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ হয়ে শিলিগুড়ির দিকে এবং গাজল, মালদহ হয়ে কলকাতার দিকে বা গাজল হয়ে বিহারের দিকে চলে যাওয়া যায়। আউশা থেকে কিছুটা গেলেই ফুলবাড়ি। সেখান থেকে তপন হয়ে মালদহে পৌঁছনোর বিকল্প রাস্তা রয়েছে। তা ছাড়া, আউশা গ্রামে ধর্মীয় নেতা হিসেবে হাবিবুল্লা জনপ্রিয় ছিল। সেই সুবাদে তার সঙ্গীদের নিয়ে এলাকাবাসীর খুব একটা সন্দেহ করার কারণ ছিল না বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
উত্তরবঙ্গের কত জন যুবককে হাবিবুল্লা দলে টানতে পেরেছে তা জানতে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের উত্তরবঙ্গ শাখা সক্রিয় হয়েছে। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত, অসম থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিক বা এ রাজ্যের যে সব যুবক ‘আকিস’-এর সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছে, তাদের মধ্যপ্রদেশ পাঠানো হত। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ভোপাল থেকে ওই সংগঠনের দশ জনকে ধরেছে। ধৃতদের সঙ্গে হাবিবুল্লা যোগাযোগ রাখত বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হাসানের কাজ ছিল সংগঠন বিস্তারে হাবিবুল্লাকে সাহায্য করা। ‘জেহাদি’ লিফলেট, বই, ভিডিয়ো সমমনোভাবাপন্ন যুবকদের মোবাইলে পাঠাত তারা। সে জন্য ধৃত দু’জনের মোবাইলের তথ্যউদ্ধার জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।